Friday 31 December 2010

ওলামা পরিষদ : সরকারের ওয়াদা ভঙ্গের প্রতিবাদে কাল বিক্ষোভ সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার

জাতীয় শিক্ষানীতি সংশোধন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মো. আফজলের অপসারণের দাবি ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের প্রতিশ্রুত অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল রাজধানীতে আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সম্মিলিত ওলামা পরিষদ। আগামীকাল বাদ জুমা মুক্তাঙ্গনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় সরকারপক্ষের দেয়া আশ্বাস তথা সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিবাদে ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় জানানো হয়েছে।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, পরিষদ নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদিন, ভাসানী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মোমতাজ চৌধুরী, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, এনডিপি মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, পরিষদের মহানগরী সভাপতি মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সেক্রেটারি মাওলানা সালেহ সিদ্দিকী, মাওলানা আবদুছ ছবুর মাতুব্বার, মাওলানা মুহাম্মদ ফাহিম ছিদ্দীকী, মুফতি মাওলানা নাছির উদ্দিন, মোফাচ্ছির মাওলানা মুহাম্মদ কামরুল হাসান, মাওলানা আবুল হাসান প্রমুখ। নেতারা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সব দল, গোষ্ঠী ও তাওহিদি জনতাকে ৩১ ডিসেম্বর মুক্তাঙ্গনে অনুষ্ঠিতব্য প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলকে সফল করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।

Wednesday 29 December 2010

তিনি কসম খেয়েছিলেন - ওলামা পরিষদ : ওলামা পরিষদের অধিকাংশ দাবি অযৌক্তিক - এইচটি ইমাম



রকিবুল হক

দফায় দফায় আলোচনা ও অনুরোধের প্রেক্ষিতে হরতাল স্থগিত করার এক দিনের মাথায় সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের দাবি-দাওয়ার অধিকাংশই অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। গতকাল তিনি বলেন, ওলামা পরিষদের দাবি পূরণের কোনো আশ্বাস দেইনি। তাদের দাবি নিয়ে আলোচনার কথা বলেছি। অপরদিকে এইচটি ইমামের এই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ওলামা পরিষদ নেতারা। তারা বলেন, দাবি পূরণের ব্যাপারে উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে কসম করেছেন। তার ওয়াদা এবং অনুরোধ অনুযায়ী হরতাল স্থগিত করা হয়েছে। এখন অস্বীকার করলে তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। তার এই বক্তব্যের বিষয়ে ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। অপরদিকে হরতাল স্থগিত করা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ওলামা পরিষদ।
সূত্রমতে, সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতিকে ধর্মহীন আখ্যায়িত করে এটি সংশোধন, ইমামদের অনুষ্ঠানে মার্কিন তরুণ-তরুণীদের নিয়ে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শনের অভিযোগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির অপসারণ এবং ’৭২ সালের সংবিধানে ফেরার নামে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে ৮ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২৬ ডিসেম্বর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ। এ ঘোষণার পর থেকেই হরতাল প্রত্যাহার করাতে ওলামাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন সরকারের প্রতিনিধিরা। এর অংশ হিসেবেই প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের সঙ্গে ওলামাদের ৩ দফা বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে তাদের দাবি-দাওয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর রাতে এইচটি ইমামের বাসায় ওলামাদের বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। এ প্রেক্ষিতেই শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হরতাল স্থগিত করার ঘোষণা দেয় ওলামা পরিষদ। ওই সংবাদ সম্মেলনে পরিষদ নেতা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন ভালোভাবে উদযাপন এবং দাবি-দাওয়া পূরণের ব্যাপারে সরকারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তাদের অনুরোধেই হরতাল স্থগিত করা হয়। তবে এক মাসের মধ্যে এসব দাবি না মানা হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে পরিষদ।
এদিকে ওলামা পরিষদের এই ঘোষণার এক দিনের মাথায় গতকাল একটি সংবাদ সংস্থার সঙ্গে সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন ও প্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ওলামাদের ঘোষণাকে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের দাবি-দাওয়ার অধিকাংশই অযৌক্তিক। দু-একটি প্রস্তাবনা গ্রহণযোগ্য। এগুলোকে বিবেচনা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের ডাকা রোববারের হরতালে একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধন ছিল। অকারণে তারা সমর্থন দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করছিল। তা আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছি। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে গৃহীত জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯-এর মূল স্তম্ভ নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। এই শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। এটি গ্রহণযোগ্য নীতি নয় বললেই তো আর পরিবর্তন করা যায় না।
সরকারের আশ্বাসে ২৬ ডিসেম্বর ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের ডাকা হরতাল স্থগিত করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করার বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওরকম কোনো আশ্বাসের কথা বলিনি। বলেছি, তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। এটা নিয়ে কেবিনেটে, সংসদে আলোচনা হবে। তারপর ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করব। ইফার ডিজিকে অপসারণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে এইচটি ইমাম বলেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেব। উল্লেখ্য, হরতালকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক নাশকতা হতে পারে, গোয়েন্দাদের এমন রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ৭ ডিসেম্বর থেকেই এই হরতাল প্রত্যাহার করাতে সরকার নানা রকম চেষ্টা শুরু করে।
এদিকে এইচটি ইমামের এই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, এইচটি ইমামের বক্তব্য সম্পর্কে আজ আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়া হবে। তবে তিনি বলেছেন, উপদেষ্টা শিক্ষানীতির মৌলিক বিষয় সংশোধনে আলাপ-আলোচনার কথা বলেছেন। তার কথার ভিত্তিতেই হরতাল প্রত্যাহার করেছি। এখন যদি তিনি অস্বীকার করেন তাহলে তা দুঃখজনক এবং রাজনৈতিক অসাধুতা হিসেবে গণ্য হবে। তার মতো একজন দায়িত্বশীল এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে এখন অস্বীকার করার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রেসনোট দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। তবে ওলামাদের সঙ্গে বৈঠকের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার কাজ করবে বলে তিনি আশা করেন।
এ বিষয়ে ওলামা পরিষদের জয়েন্ট সেক্রেটারি ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, এইচটি ইমাম দাবি পূরণের ব্যাপারে ৩ বার কসম করেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘পর্যায়ক্রমে শিক্ষানীতি সংশোধন করা হবে। ইফা ডিজির অপসারণ বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া হবে। এসব বিষয়ে এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আপনারা হরতাল প্রত্যাহার করেন, সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ তিনি বলেন, আমাদের দাবির বিষয়ে সরকারিভাবে একটি ঘোষণা দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। রোববারের মধ্যে কোনো ঘোষণা না এলে আজ পরিষদের বৈঠকের মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও ড. মাদানী জানান।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ : এদিকে জাতীয় শিক্ষানীতি সম্পর্কে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে হরতাল স্থগিত করেছে মর্মে প্রদত্ত আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ। এ বিষয়ে গতকাল পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় বলা হয়, এতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে হরতাল আহ্বান এবং স্থগিত সম্পর্কিত সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ নেতাদের আলোচনা সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর নিদারুণ অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
সভায় আরও বলা হয়, পরিষদ নেতারা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠককালে পরিষদের দৃষ্টিতে জাতীয় শিক্ষানীতির ত্রুটি-বিচ্যুতি পেশ করা হয়। তারা পরিষদ নেতাদের বক্তব্য অত্যন্ত ধৈর্যসহ শোনেন এবং কোনো বাধ্যবাধকতা বা শর্তারোপ করেননি। জাতীয় শিক্ষানীতির ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণার্থে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস প্রদানের প্রেক্ষিতে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ তাদের হরতাল স্থগিত ঘোষণা করে। আইনমন্ত্রী ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের ভাষায় শিক্ষানীতি সম্পর্কে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে পরিষদ হরতাল স্থগিত করেনি—হরতাল স্থগিত করা সম্পর্কে তাদের বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তির বেড়াজাল সৃষ্টি করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের এক সূক্ষ্ম কৌশল বৈ আর কিছুই নয়।
তারা বলেন, শিক্ষানীতির সংশোধন ও ইফার বিতর্কিত ডিজির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রশ্নে আমরা আমাদের দাবিতে অটল আছি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যদি সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ হরতালের পাশাপাশি যে কোনো বড় ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করলে উদ্ভূত ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে

মোটা চালের কেজি ৩৮ টাকা ফাঁপরে নিম্ন আয়ের মানুষ

সৈয়দ মিজানুর রহমান

বাজারে এখন এক কেজি মোটা চালের দাম ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা। ৩৬ টাকা দরে যে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে তার মান খুব একটা ভালো না। তবে মান ভালো না হলেও কিছুই করার নেই গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষের।
চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা বাজারে এখন ৩৮ টাকা কেজি দরে মোটা চাল (স্বর্ণা বা চায়না ইরি) বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এ মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা দরে। গত সাত দিনে প্রতি কেজি মোটা চালের দর বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন গতকাল আমার দেশকে জানান, পাইকারি চালের আড়তে গত কয়েক দিন ধরেই দর ঊর্ধ্বমুখী। আড়তে সাত দিনের মাথায় প্রতি বস্তা মোটা চালের দর বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। তিনি দাবি করেন, মিলাররা চালের মজুদ গড়ে তুলছে। ফলে আড়তে মোটা চালের আমদানি কম। এ কারণে দাম বাড়ছে।
বাদামতলীর চাল ব্যবসায়ী আকবর হোসেন জানান, শুধু মোটা চালই নয়, গত কয়েকদিন ধরে সব ধরনের চালের দরই বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘সরকারের হাতে চালের খুব একটা মজুদ নেই’—এমন খবর ছড়িয়ে রাইসমিলগুলো বাড়তি ফায়দা লুটছে। মিল থেকে চাল সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে গত কয়েক দিনে মোটা চালের দরই বেশি বেড়েছে বলে জানান পাইকারি চাল বিক্রেতা আকবর হোসেন।
সরকারি বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) বাজার দর অনুসন্ধান ও গবেষণা সেল সূত্র জানিয়েছে, গত সাত দিনের মাথায় মোটা চালের দর কয়েক দফায় বেড়েছে। টিসিবি জানিয়েছে, গত এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দর বেড়েছে ৪০ শতাংশ।
টিসিবি’র দাবি, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা দরে। গত এক মাসে মোটা চালের দর বেড়েছে ৮ শতাংশ। টিসিবি’র তথ্য তুলে ধরে মোটা চালের দর জানতে চাইলে পলাশী মোড় কাঁচা বাজারের চাল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন আমার দেশকে বলেন, ৩৮ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই। টিসিবি মোটা চালের দর ৩৪-৩৬ টাকা বললেও বাস্তবে এ দরে রাজধানীর কোনো বাজারেই মোটা চাল মিলছে না বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী। তবে অতি নিম্নমানের মোটা চাল ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা দরে পাওয়া যায় বলে জানান তিনি। এ মানের চালের ক্রেতা খুবই কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা কেজি। ভালো মানের নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হয় ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি। তবে টিসিবি জানিয়েছে, মিনিকেট ও নাজির চাল বিক্রি হয় ৪৪ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
পাইজাম ও লতা মানের চাল গতকাল বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে। তবে টিসিবি বলছে, এ মানের চাল গতকাল ৩৯ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
টিসিবি’র হিসাবে ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাজারে এক কেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৬ টাকা দরে। সে সময় মোটা চালের দর ছিল ১৭ থেকে ১৯ টাকা কেজি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার চাল কলগুলোতে যে দরে চাল বিক্রি হচ্ছে, রাজধানীর বাজারে এখন সে চাল প্রতি কেজিতেই ৯ থেকে ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে বাবুবাজারের চালের আড়তদার আনসার হোসেন বলেন, ‘চালের বাজারে এখন শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই। ভারতে দর বাড়ার খবর বেরুলেও এখানে দাম বেড়ে যায়। আবার সরকারের কাছে মজুদ নেই, এমন তথ্যও মিলাররা জানেন। বাজারে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা।’
দেশীয় মিনিকেট চালের প্রধান উত্সস্থল কুষ্টিয়া। গতকাল কুষ্টিয়ার একটি রাইস মিল মালিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তারা কেন চাল মজুদ করছেন? জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ চাল ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি হচ্ছে। নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠন চাঁদা তুলছে। বেড়ে গেছে ট্রাক ভাড়া। ট্রাক নিয়ে আড়তে ঢুকতে গেলেও চাঁদা গুনতে হচ্ছে।’ এসব কারণে দাম বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, শেরপুর, রাজশাহী ও নাটোরসহ বিভিন্ন জেলার রাইস মিলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ধান বা চালের কোনো ঘাটতি নেই। তার পরও কেন চালের বাজার চড়া—জানতে চাইলে বাবুবাজারের আরেক চাল বিক্রেতা ফয়সাল মোল্লা জানান, চালের দর বাড়লে কৃষকের কোনোই লাভ নেই। এখন বাজারে যেসব চাল আসছে, সেগুলো মিলাররা মজুদ রেখেছিলেন। তাদের হাতে ধানের অভাব নেই। এছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীরাও বাড়তি ফায়দা লুটছে।

Tuesday 28 December 2010

দাবি বাস্তবায়নে টালবাহানার পরিণতি শুভ হবে না : ওলামা পরিষদ

স্টাফ রিপোর্টার

সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের নেতারা বলেছেন, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বর্জিত জাতীয় শিক্ষানীতির সংশোধন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি. শামীম মো. আফজালের অপসারণ ও যথোপযুক্ত শাস্তি বিধান, ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ এবং সংবিধান থেকে ‘মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণাঙ্গ আস্থা’র বিষয়টি মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে ২৬ ডিসেম্বর হরতাল কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বেশ ক’বার পরিষদ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিষদ উত্থাপিত যুক্তিযুক্ত দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে মর্মে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এবং প্রেসনোট আকারে তা জাতিকে জানানো হবে-এমন নিশ্চয়তার প্রেক্ষিতেই ওই হরতাল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু সরকার পক্ষ এখন তাদের দেয়া ওয়াদা থেকে সরে গিয়ে যে তালবাহানার আশ্রয় গ্রহণ করেছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং রাজনৈতিক অসততা ও মোনাফেকির শামিল। এ ধরনের শঠতা ও ওয়াদা ভঙ্গের পরিণতি শুভ হবে না বলে পরিষদ নেতারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
গতকাল বিকালে ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা যাইনুল আবেদীন, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, আলমগীর মজুমদার, মাওলানা আহমেদ আলী কাসেমী, মমতাজ চৌধুরী প্রমুখ। সভায় উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে সরকারের পক্ষে তার প্রদত্ত ওয়াদা বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ আবারও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
এদিকে শিক্ষানীতি সংশোধনসহ অপরাপর দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সূচিত আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখের সঙ্গে মতবিনিময় সভার প্রথমদিনে গতকাল মাগরিব বাদ বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়।

Saturday 24 July 2010

উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি যেন দূরের বাঁশি

ফারুক ইকবাল, ফিরোজ শিবলী ও ভূঁইয়া নজরুল, চট্টগ্রাম | কালের কণ্ঠ | ঢাকা, শনিবার, ৯ শ্রাবণ ১৪১৭, ১১ শাবান ১৪৩১, ২৪ জুলাই ২০১০

সব সরকারই বলে এসেছে, জাতীয় উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন অপরিহার্য। কিন্তু প্রতিটি সরকারের আমলেই উপেক্ষিত হয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রামের উন্নয়ন। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংকট, জলাবদ্ধতা, চলাচলের অনুপযোগী রাস্তাঘাট, যানজট, শিল্প ও বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা সমস্যায় নগরবাসীর জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে রিং রোড, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল এবং যানজট নিরসনে একাধিক ফ্লাইওভার নির্মাণ, পতেঙ্গা ও পারকিতে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সরাসরি রেল লাইন এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ পরিকল্পনার সুর নগরবাসীর কাছে দূরের বাঁশির মতো শোনায়। কেননা অনেক প্রত্যাশা সত্ত্বেও নতুন বাজেটে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে লালদীঘির জনসভায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব তিনি নিজ হাতে গ্রহণ করবেন। চট্টগ্রামের নবনির্বাচিত মেয়র এম মঞ্জুর আলমও তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক ও পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বরাবরের মতো এবারও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সেসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায় চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে।
চট্টগ্রামবাসী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, 'আগের অভিজ্ঞতা থেকে এবারও কিছু প্রত্যাশা করছি না। তবে নতুন মেয়র এম মঞ্জুর আলম দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র, এখন তিনি কী করেন, তা দেখার অপেক্ষায় আছি।'
বিশিষ্ট আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, 'রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় গেলে কথা দিয়ে কথা রাখেন না। কিন্তু সমাজকর্মীরা কথা রাখার চেষ্টা করেন। নতুন মেয়র এম মঞ্জুর আলম একজন সমাজকর্মী হিসেবে ভোট পেয়ে ক্ষমতায় গেছেন বলে তিনি কী করেন, তা দেখার আশায় রয়েছি।' সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় ছাড়া চট্টগ্রামের উন্নয়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, শুধু সমন্বয়ের অভাবেই বিগত সময়ে চট্টগ্রামের উন্নয়ন হয়নি। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সমন্বয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে মেয়রের বিশেষ ভূমিকা না থাকলেও তাঁর সহযোগিতা ছাড়া সেটা সম্ভবও নয়।
চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ মুহূর্তে চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধান ইস্যু বলা যায় ৯টি। সেগুলো হলো:
জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার কোটি টাকা কাগজে-কলমে
বন্দরনগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ সমস্যা নিরসনে হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা কাগজে-কলমে রয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে বেদখল হয়ে যাওয়া ২২টি প্রাকৃতিক খাল উদ্ধার ও ৩৩টি নতুন খাল খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এর কোনো অগ্রগতি নেই। ১৯৯৫ সালে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) মাস্টারপ্ল্যান এবং ২০০৭ সালে শেষ ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান করলেও বাস্তবে তা আলোর মুখ দেখেনি। এসব প্ল্যানে মহানগরীকে ১১টি জোনে বিভক্ত করে জলাবদ্ধতা নিরসনের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবে পরিণত হয়নি।
চউকের প্রধান প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, মাস্টারপ্ল্যান ও ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন দুটি খাল খনন এবং বিদ্যমান খালগুলোকে সংস্কার ও পুনর্বাসন করা না গেলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। আর খাল খননের কাজ করবে সিটি করপোরেশন।
নগরীর চারদিকে ঘিরে থাকা ২২টি বড় খাল দখল হয়ে গেছে অনেক আগে। খালগুলো হচ্ছে চাক্তাই, মির্জা, সদরঘাট, হিজরা, ত্রিপুরা ছড়া, শীতল ঝরনা, নোয়া, জেলেপাড়া খাল ইত্যাদি। এসব খাল দখলের ফলে টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর ৭০ শতাংশ এলাকা কোমর ও হাঁটুপানিতে ডুবে যায়।
নবনির্বাচিত মেয়র এম মঞ্জুর আলম তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেবেন বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন। এ জন্য 'জলাবদ্ধতা নিরসন বিভাগ' নামে নতুন একটি বিভাগ খোলা হবে বলে তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
পাহাড়ধস ও ঝুঁকিতে হাজার হাজার পরিবার
নগরীতে নির্বিচারে চলছে পাহাড় কাটা। স্থানীয় সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে থাকা প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে ইটখোলা ও আবাসন ব্যবসা করছে। এ ছাড়া পাহাড়গুলোতে গত দেড় যুগে কোনো বনায়ন হয়নি। ফলে প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত তিন বছরে পাহাড়ধসে প্রায় দেড় শ মানুষ মারা গেছে। বৃষ্টি হলে পাহাড়ে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষজন আতঙ্কে থাকে। নগরীর মতিঝরনার জিলিপি পাহাড়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের পাহাড়, একে খান পাহাড়, বায়েজীদ, কুমিরা, চট্টগ্রাম সেনানিবাসসংলগ্ন তিন নম্বর বাজার এলাকার পাহাড়, ফতেয়াবাদ চৌধুরীহাটের পশ্চিমের পাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে দরিদ্র লোকজন।
২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম সেনানিবাসসংলগ্ন এলাকা, বায়েজীদ, লালখান বাজারের মতিঝরনা, কুসুমবাগ এলাকায় পাহাড়ধসে ১৩২ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়া ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট নগরীর মতিঝরনা এলাকায় আবারও পাহাড়ধসে ১১ জন নিহত হয়। টানা বৃষ্টিতে যেকোনো সময় এসব এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ পাহাড়ের পাদদেশে কয়েক লাখ মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সরাসরি কোনো আইন নেই। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মামলা করে আসছে অধিদপ্তর। এর ফলে আইনের ফাঁক দিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।' পরিবেশকর্মী শরীফ চৌহান বলেন, 'সিডিএ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দুর্বলতার সুযোগে প্রভাবশালীরা চট্টগ্রামকে পাহাড়শূন্য করছে।'
ঝুলে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন
চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। রয়েছে ভারী যন্ত্রপাতির সংকটও। বিশেষায়িত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি বেসরকারি অপারেটর। এতে ঠিকাদার নিয়োগ দিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। এনসিটির পশ্চাৎ সুবিধাদির নির্মাণ কাজও সম্পন্ন হয়নি। বন্দরের ৭ থেকে ১০ নম্বর জেটি ভেঙে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ এবং আমদানি করা গাড়ি রাখার জন্য বন্দর অভ্যন্তরে বহুতল কার পার্ক নির্মাণ প্রকল্পসহ আরো অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা ঝুলে আছে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। বন্দরের ১ নম্বর জেটির উজানে সদরঘাট থেকে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু পর্যন্ত নদী তীরে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণসহ ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। বিশাল এ প্রকল্পের কাজে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হলেও ঠিকাদার নিয়োগ ও বেসরকারি খাত থেকে ড্রেজারের সংস্থান এখনো হয়নি। বন্দরের একমাত্র ড্রেজার 'খনক' দুর্ঘটনায় প্রায় এক বছর ধরে অচল। এটি এখন চিটাগং ড্রাইডকে বড় ধরনের মেরামত ও ইঞ্জিন পুনঃস্থাপনের অপেক্ষায়।
ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ১৭ মে আগ্রহী ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রস্তাব (আর্থিক ও কারিগরি) গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছিল। এতে ৪০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প দরপত্র কিনেছে। সেগুলোর মূল্যায়ন কাজ চলছে। এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় কনটেইনার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত দ্বি-স্তরবিশিষ্ট ফটক নির্মাণ, স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন ও বন্দর অভ্যন্তরে ৯০০ মিটার সড়কসহ ১ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণের কথা রয়েছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের মাত্র ৬০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হতে চলতি বছর পেরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী খায়রুল মোস্তফা।
চট্টগ্রাম চেম্বারসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি হচ্ছে, কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে বন্দরের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ তথা জেটি নির্মাণ করা হোক। কিন্তু এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরকে ভারত, ভুটান ও নেপালি পণ্যের ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষ কতটা প্রস্তুত ও সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারবে তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে সংশয় রয়েছে। ট্রানজিট পণ্য পরিবহনে উপযুক্ত যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টিও এখনো দৃশ্যমান নয়। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশের পণ্যের ট্রানজিট সুবিধা দিতে তারা প্রস্তুত। কেননা বর্তমানে বন্দরে জাহাজ বার্থিং ও পণ্য হ্যান্ডলিং সুবিধার মাত্র ৬০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে।
গভীর সমুদ্রবন্দর আঁতুড়ঘরেই
বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া চ্যানেলে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন প্রকল্প এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জাপানি প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী তিন স্তরে বাস্তবায়নযোগ্য এই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালের মধ্যে এ বন্দরের প্রথম ধাপের জন্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব_পিপিপির আওতায় তা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপিত হলে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল বিশেষ করে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য, কলকাতা বন্দর, নেপাল, মিয়ানমার ও চীনের কুনমিং প্রদেশে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হবে।
সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম ধাপে একটি পোতাশ্রয়ে ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৯টি জেটি নির্মাণ করা হবে। যেখানে ৯টি মাদার ভেসেল (বৃহদায়তনের জাহাজ), চারটি কনটেইনারবাহী ও পাঁচটি সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়ানো যাবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০৩৫ সালের মধ্যে আরো দুটি পোতাশ্রয়ের প্রতিটি সমসংখ্যক ও দৈর্ঘ্যের জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০৫৫ সালের মধ্যে আরো তিনটি পোতাশ্রয়ের প্রতিটিতে সমসংখ্যক ও সমদৈর্ঘ্যের জেটি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে এ বৃহৎ প্রকল্পের কাজ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্ল্যানিং) হাদী হোসাইন বাবুল কালের কণ্ঠকে জানান, বর্তমানে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের জন্য পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
জানা যায়, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের সমীক্ষাকাজ সম্পাদনের জন্য এর আগে দুই ধাপে বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এটি জাতীয় পর্যায়ের একটি বৃহৎ প্রকল্প। তাই এ প্রকল্পের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। বন্দর কর্তৃপক্ষ এমন একটি প্রকল্পের ব্যয়ভার একা বহন করতে পারে না।
লোডশেডিং ও উৎপাদন সংকটে বিদ্যুৎ
চট্টগ্রামে এ মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৬০০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৬০ থেকে ৩৭০ মেগাওয়াট অর্থাৎ গড় লোডশেডিং ২৮০ মেগাওয়াট। চট্টগ্রামে অবস্থিত সরকারি চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১০টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে চারটি। এ চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৮৮৬ মেগাওয়াট হলেও গত বৃহস্পতিবার পাওয়া গেছে ২৬৬ মেগাওয়াট।
এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১ নম্বর ইউনিটটি বন্ধ করে ওই গ্যাস দিয়ে ১৬ জুলাই থেকে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে। ফলে নতুন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলেও জাতীয় গ্রিডে নতুন করে কোনো বিদ্যুৎ যোগ হয়নি।
বিদ্যুতের অভাবে বন্দরনগরীতে স্থাপিত শিল্প-কারখানাগুলো প্রতি মাসে লোকসান গুনছে। বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি নাসিরুদ্দিন চৌধুরী ব্যাপক লোডশেডিংয়ের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগে বছরে তিন-চার মাস বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হতো। কিন্তু এখন সারা বছর ধরে এ ভোগান্তি চলছে। এ কারণে চট্টগ্রামে গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে জেনারেটর জ্বালানি বাবদ প্রতি মাসে ডিজেলে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। অন্যান্য ক্ষতির কথা নাইবা বললাম।'
পানি সংকট : দুটি প্রকল্প হিমাগারে
১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর চার প্রকল্পের মধ্যে মাত্র একটি বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৯৮৭ সালে হালদার পানি পরিশোধন করে মোহরা পানি পরিশোধন প্রকল্প এবং ৭২টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে নগরবাসীর চাহিদার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করছে ওয়াসা।
ইতিমধ্যে হিমাগারে গেছে মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় ও মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প। ২০০৫ সালে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে মাত্র।
গত ২৩ বছরে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদন না বাড়ায় এখনো নগরীর অনেক এলাকায় পানি পাওয়া যায় না। চট্টগ্রামকে দ্বিতীয় রাজধানী বলা হলেও এখানকার আটটি ওয়ার্ডে আংশিক পানি সংযোগ লাইন থাকলেও ১৩টি ওয়ার্ডে পানির কোনো লাইন নেই। পানি না থাকা পতেঙ্গা, হালিশহর, বাকলিয়া, অক্সিজেন, বালুচরা ও ফতেয়াবাদ এলাকায় বসবাসকারীরা গভীর নলকূপের ওপর নির্ভরশীল। এসব এলাকার পানিতে লবণাক্ততা ও আয়রনের সমস্যা থাকায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, 'কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ২০১২ সালের মধ্যে শেষ না হওয়া পর্যন্ত নগরীর পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। তবে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'
গ্যাস নাই, গ্যাস নাই
কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড জানায়, চট্টগ্রামে আবাসিক গ্রাহক, শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে এখন মোট ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৩০ থেকে ২৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে ৪৮ থেকে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চলে যায় কর্ণফুলী সার কারখানায় (কাফকো)। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাউজান তাপবিদ্যুৎ এবং শিকলবাহা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দৈনিক ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যাচ্ছে। এই স্বল্প গ্যাস দিয়ে রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট (২১০ মেগাওয়াট) চলছে। তবে গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে সেখানকার আরেকটি ইউনিট।
কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড কর্তৃপক্ষও এই সংকটজনক পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেনি, বরং গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করা না গেলে ভবিষ্যতে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট আরো ভয়াবহ রূপ নেবে বলে কর্মকর্তারা জানান।
কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গ্যাস সরবরাহের তুলনায় সমপ্রতি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংকট বেড়েছে। দিন দিন গ্যাসের গ্রাহক বাড়ছে। কিন্তু এর বিপরীতে সরবরাহ কমে যাচ্ছে। গত সোমবার সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট।'
এদিকে গত এক মাসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। নগরীর লালখান বাজার, কদমতলী, টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনি, হালিশহর, খুলশী, রৌফাবাদ, আগ্রাবাদের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, হাটহাজারীর চৌধুরীহাটে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
স্থায়ী বাস টার্মিনাল নেই, দুঃসহ যানজট
নগরীর বহদ্দারহাট টার্মিনাল ছাড়া চট্টগ্রামে আর কোনো স্থায়ী বাস টার্মিনাল নেই। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি রুটের বাসের জন্য কোনো টার্মিনাল নেই। এ ছাড়া ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড ব্যবহারকারী দেশের উত্তরের জেলায় যাতায়াতকারী বাসগুলোর জন্য কোনো টার্মিনাল নেই। রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থেকেই এসব এলাকার বাসগুলো যাত্রী পরিবহন করে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, কক্সবাজার রুটের জন্য শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণপাড়ে, রাঙামাটি রুটের বাসগুলোর জন্য অক্সিজেন এবং ঢাকা ট্রাঙ্ক রুটের বাসগুলোর জন্য বাংলাবাজার এলাকায় পৃথক তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রাকগুলোর জন্য একটি ট্রাক টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে নগরীতে যানজট নিরসনের জন্য পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য একনেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট এবং জিইসি মোড়ের ফ্লাইওভারের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৩ জুলাই একনেকে অনুমোদন পাওয়া কদমতলী ফ্লাইওভারের কনসালট্যান্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা যায়।
সিডিএর চেয়ারম্যান বলেন, এসব ফ্লাইওভার এবং নগরীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের যানজট সমস্যা নিরসন হবে।
পর্যটন সম্ভাবনা চরম অবহেলায়
পাহাড়, সমুদ্রঘেরা অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার চট্টগ্রামে প্রত্যাশা অনুযায়ী আধুনিক পর্যটন ও বিনোদনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফয়'স লেক একমাত্র ব্যতিক্রম। বাণিজ্যিক এ নগরীতে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও পর্যটক এলেও তাঁদের নিরাপত্তাসহ পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা সীমিত। নেই কোনো পাঁচতারকা মানের হোটেল। নগরীর স্টেশন রোড এলাকায় পর্যটন মোটেলটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা চলছে। নগরীর পতেঙ্গায় অবস্থিত সমুদ্রসৈকত দোকানপাটে ঘিঞ্জি, আর আনোয়ারার ঝাউবন শোভিত পারকি সৈকতে পর্যটকদের যাতায়াত ও বিনোদনের ক্ষেত্রে উন্নত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অনেকের মতে, পাহাড়ঘেরা এ বন্দরনগরীকে পরিকল্পিত পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলা গেলে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।

Monday 19 July 2010

ট্রাইব্যুনালে দুই বিচারপতির কাজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুই বিচারপতির কাজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হাইকোর্টের কোনো বিচারপতির অন্য কোনো ট্রাইব্যুনালে কাজ করার সাংবিধানিক এখতিয়ার নেই। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চে গতকাল এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আগামী সোমবার পর্যন্ত রিটের শুনানি মুলতবি করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নওয়াব আলী ও সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী রিট আবেদনটি দায়ের করেছেন। রিট আবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাইকোর্টের বিচারক বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের কাজ করার এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান ও বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ দু’জনের কাজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় সিনিয়র আইনজীবী সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এমপি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি প্রমুখ রিট আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্খিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানিতে বলেন, হাইকোর্টের দু’জন কার্যরত বিচারপতিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ট্রাইব্যুনালে কাজ করে যাচ্ছেন। একই সাথে তারা হাইকোর্টেরও বিচারপতি। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর মানে হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের ওপর কোনো আদালত নেই। সুপ্রিম কোর্টের দু’টি বিভাগ। আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ। সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃত্ব করবে। অথচ হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারপতিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্য করা হয়েছে। তাদের কার্যক্রম এখতিয়ারবহির্ভূত। কারণ সংবিধান বর্ণিত অধস্তন আদালতে হাইকোর্টের দুই বিচারপতি কাজ করছেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদের প্রতিও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত বিচারকরূপে দায়িত্ব পালন করে থাকলে ওই পদ থেকে অবসর গ্রহণের কিংবা অপসারিত হওয়ার পর তিনি কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে ওকালতি বা কাজ করতে পারবেন না অথবা বিচার বিভাগীয় বা আধা বিচার বিভাগীয় পদ অথবা প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে বহাল হবেন না।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, অবসর গ্রহণের পরও বিচারপতিদের যেসব পদে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে হাইকোর্টের একজন কার্যরত বিচারপতির এসব পদে দায়িত্ব পালনের প্রশ্নই আসে না।
রুহুল কুদ্দুস বনাম বিচারপতি এম এ আজিজ মামলায় হাইকোর্টের দেয়া রায় আদালতের সামনে উথাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ওই রায়ে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, হাইকোর্টের কোনো বিচারপতিকে কোনো ট্রাইব্যুনাল বা লাভজনক পদে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এ ধরনের নিয়োগ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের দুই বিচারপতিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্টের নির্দেশে আইন সচিব এ নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ সংবিধানের ম্যান্ডেট হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ ও এ সংক্রান্ত সব এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের। অন্য কারো এ ধরনের এখতিয়ার নেই। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদ জাহাঙ্গীর এক সপ্তাহ সময় চান। আদালত আগামী সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এ প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে হাইকোর্টে কোনো রিট আবেদন দায়ের করা হলো।
এ দিকে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো: শাহিনুর ইসলাম তার কার্যালয়ে উপস্খিত সাংবাদিকদের সামনে সংবাদ বিবৃতি পাঠ করেন। এই বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতার বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের বিচারের জন্য গত ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে বিচারকবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট ১৯৭৩ ২২ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রুলস অব প্রসিজিউর প্রণয়নে সক্রিয় হন। ট্রাইব্যুনাল গঠনের ১০২ দিন পর এটি দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল রুলস অব প্রসিজিউর ২০১০ শিরোনামে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল বাংলা ভাষাতেও এই বিধিমালা প্রস্তুত করছেন। এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি গেজেট আকারে আগামী
সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
http://www.dailynayadiganta.com/fullnews.asp?News_ID=222849&sec=1

Saturday 26 June 2010

যুবলীগের মাছ চাষ, এলাকায় জলাবদ্ধতা

ফেনীর সোনাগাজী পৌর এলাকা ও সদর ইউনিয়নের সংযোগস্থলের ডাংগি খাল দখল করে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এভাবে বাঁধ দিয়ে যুবলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মাছের চাষ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে পৌর এলাকাসহ সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। একই কারণে প্রায় ৩০০ একর জমির আউশ ধান নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রমিজেরপুল এলাকা থেকে ছেলামতের বাজার ও নুর আহমদের বাড়ির সামনে থেকে বহদ্দারহাটসংলগ্ন কুদ্দুস ডিলারের বাড়ি পর্যন্ত ডাংগির খালের প্রায় দুই কিলোমিটারে বাঁধ দিয়ে মাছের চাষ করা হচ্ছে। যুবলীগের সদর ইউনিয়ন শাখার সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুবলীগের কর্মী নূরনবী টিপু, আরিফ হোসেন, মো. রিয়াদ, নুর উদ্দিন, নুর করিম, ওয়াজিউল্লা, রফিক ও হেলাল ওই বাঁধ নির্মাণ করেছেন। তাঁরা ওই খালে পশ্চিম চরখোয়াজ মত্স্য প্রকল্পের সাইনবোর্ড পুঁতে রেখেছেন।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, এ অবৈধ বাঁধের কারণে এক মাস ধরে পৌর এলাকার চর গণেশ, সরকারি খাদ্য গুদাম এলাকা, চৌধুরী লেন, কলেজ রোড, তুলাতলি গ্রামের চাকলাদারবাড়ি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চর চান্দিয়া গ্রামের ফাতেমা মঞ্জিল, প্রাইম আইডিয়াল একাডেমি এলাকা, সদর ইউনিয়নের হালিম ডাক্তারের পুল, ছেলামতের বাজার, রমিজেরপুল এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব গ্রামের আউশ ধানসহ অন্যান্য ফসল নষ্ট হচ্ছে।
পৌর মেয়র জামাল উদ্দিন জানান, খালে অবৈধভাবে বাঁধ দেওয়ায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর নিজের বাড়ির সামনেই পানি জমে আছে।
চর গণেশ গ্রামের কৃষক আবদুল হাদী বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এ খালে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতায় আমাদের জমির আউশ ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাঁরা জানান, শিগগিরই পানি চলাচলের ব্যবস্থা না করলে পুরো ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।’
পাউবোর সোনাগাজী শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার হোসেন জানান, এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, এলাকাবাসী তাদের প্রয়োজনে বাঁধ দিয়েছে। আমরা বাঁধ দিইনি। তিনি বলেন, মাছের চাষের ফলে পানি প্রবাহে সমস্যা হবে না। তা ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় পাইপ বসানো আছে। এখানে রুই, কাতল মাছের চাষ করা হচ্ছে।
উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নুরুল আবসার জানান, আনোয়ার হোসেন নামে সদর ইউনিয়নে যুবলীগের কোনো নেতা নেই।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-06-26/news/73827

দেশজুড়ে অসহনীয় লোডশেডিং

ঘাটতি আড়াই হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে

বিদ্যুৎ সংকট কাটছে না। উল্টো দিন দিন তা আরো প্রকট হচ্ছে। উৎপাদনের সঙ্গে চাহিদার ফারাক বাড়তে থাকায় অসহনীয় লোডশেডিংয়ে ভুগছে সারা দেশের মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টাও মার খাচ্ছে গ্যাস স্বল্পতা ও উৎপাদনকেন্দ্রগুলোতে কারিগরি ত্রুটির কারণে। এ অবস্থায় বর্তমানে দৈনিক দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ কম উৎপাদিত হচ্ছে। এতে বিদ্যুৎ ঘাটতি এখন প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও পিডিবি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলো বলেছে, উৎপাদন ঘাটতি মোকাবিলায় গত কয়েক দিনে খোদ রাজধানীতেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেড করা হয়েছে। আর গ্রামাঞ্চলে সারা দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না। এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান ভূঁইয়া শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি চাহিদার অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পাচ্ছেন।
সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানির (ডিপিডিসি) আওতায় বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়ায় এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট। অথচ ডিপিডিসি পাচ্ছে গড়ে সাড়ে ৬০০ মেগাওয়াট। ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কম্পানি (ডেসকো) ৫৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে পাচ্ছে মাত্র ৩০০ মেগাওয়াট। প্রায়ই বরাদ্দের পরিমাণ চাহিদার অর্ধেকের নিচে নেমে যাচ্ছে।
এদিকে বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে রাত ৮টা থেকে ১০টা এবং ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত আধাঘণ্টা পরপর লোডশেড করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সালেহ আহমেদ বলেন, সবাই যেন খেলার অন্তত কিছু কিছু অংশ দেখার সুযোগ পায় সে জন্যই এ ব্যবস্থা। তিনি জানান, উন্মুক্ত স্থানে মিরপুর ও উত্তরায় মোট তিনটি বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন করেছে ডেসকো।
বোরো মৌসুম শেষেও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, প্রতি মাসে ৩৫ থেকে ৪০ মেগাওয়াট হারে চাহিদা বাড়ছে। ফলে সংকট অপরিবর্তিত রয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে গ্যাস সংকটকে দায়ী করছে পিডিবি। গত বুধবার পিডিবির চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবির বলেন, গ্যাসের অভাবে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন এক হাজার ৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও পেট্রোবাংলা সাড়ে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না। পিডিবির গণসংযোগ বিভাগের পরিচালক সাইফুল হাসান বলেন, আর দুই থেকে আড়াই শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ পেলে দিনে অতিরিক্ত এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।
এদিকে বন্ধ থাকা বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্র ১৮ দিন পর গতকাল উৎপাদনের ফিরেছে। রাত ৮টা নাগাদ ৯০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। এতে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Saturday 3 April 2010

জুলাইয়ের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে: আবুল মাল আবদুল মুহিত

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি | Prothom-alo তারিখ: ঢাকা, শনিবার, ৩ এপ্রিল ২০১০, ২০ চৈত্র ১৪১৬, ১৭ রবিউস সানি ১৪৩১

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে দেশে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। আজ শুক্রবার দুপুরে হবিগঞ্জ সার্কিট হাউসে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত সাত বছর দুর্বৃত্ত সরকারের নেতৃত্বে দেশ পরিচালিত হয়েছে। তারা লুটপাট করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে আবদুল মুহিত বলেন, তাদের আমলে কোনো দরপত্রে ঠিকাদারেরা অংশ নিত না। বর্তমান সরকারের আমলে প্রচুর ঠিকাদার আগ্রহ দেখিয়ে কাজ নিচ্ছেন। তাঁরা জানেন, এ সরকার সৎ ও ন্যায়ের মধ্যে কাজ করে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন সিরাজুল হক চৌধুরী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, আলমগীর ভূঁইয়া, আকবর হোসেন, সজীব আলী, শরীফ উল্লাহ, সেলিম চৌধুরী, মোতাচ্ছিরুল ইসলাম প্রমুখ।
পরে অর্থমন্ত্রী হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন।

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2010-04-02/news/53442

'২০১৩'র মধ্যে ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে'

Sat 3 Apr 2010 6:00 PM BdST

rtnn সিলেট, ০৩ এপ্রিল (আরটিএনএন ডটনেট)-- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ২০১৩ সালের মধ্যে ৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহের জন্য সরকার কাজ করছে।

শনিবার সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে নির্মিত ‘বারকাতুল্লাহ ইলেকট্রো ডাইনামিক’ নামের ৫১ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুত প্লান্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে ১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদুত কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এসময় আগামী দুই মাসের মধ্যে আরো প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুত কেন্দ্রের কার্যাদেশ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, বেসরকারি খাতে আরো প্রায় ৫ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।

বিদ্যুত সমস্যা মোকাবেলায় সরকার গত মাসে ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে ৮শ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন একটি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে বিদ্যুত আমদানির উপায় খোঁজার পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুত বিনিময় কার্যক্রম নিয়ে দু'দেশের কারিগরি প্রতিনিধি দল কাজ করে যাচ্ছে।'

সার কারখানা বন্ধ করে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে আজ থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের ব্যবস্থা শুরু হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশবাসী বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়ন দেখতে পাবেন।

তিনি বলেন, গ্যাস সঙ্কট মোকাবেলার জন্য সরকার দ্রুততার সঙ্গে এলএনজি গ্যাস (লিকুইড ন্যাচারল গ্যাস) আমদানির চেষ্টা করছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর এটা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সিলেট সফর।

আরটিএনএন ডটনেট/প্রতিনিধি/আইএইচ/এমএম_১৫৫৪ ঘ.

http://rtnn.net/details.php?id=23257&p=1&s=4

Thursday 1 April 2010

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই: অর্থমন্ত্রী

Tue 30 Mar 2010 9:53 PM BdST

rtnn ঢাকা, ৩০ মার্চ (আরটিএনএন ডটনেট)-- জ্বালানি খাতে দুর্ভিক্ষ চলছে দাবি করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিএনজি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ নিয়ে জ্বালানি ও বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দেশে সিএনজি গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক কম উল্লখে করে অর্থমন্ত্রী বলেন, দাম না বাড়িয়ে কোন উপায় নেই। কারণ বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ দিন দিন বাড়ছেই।

জ্বালানি খাতে দুর্ভিক্ষ চলছে বলে সরকারের আলাদা কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলেও জানান মন্ত্রী।

মুহিত বলেন, ‘গাড়িতে সিএনজি ব্যবহারের হার অনেক বেড়ে গেছে। এ খাতে সরকার প্রতি বছর বড় অংকের ভর্তুকিও গুণছে। তাই মূল্য বাড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই।’

বিগত নয় বছর ধরে বিদ্যুত খাতে কোন উন্নয়ন নেই অভিযোগ করে তিনি বিদ্যুত ব্যবস্থাপনার জন্য বিদ্যুতের দামও বাড়ানোর কথা বলেন।

http://rtnn.net/details.php?id=23136&p=1&s=2

শিক্ষার পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে: শিক্ষামন্ত্রী

Thu 1 Apr 2010 9:58 PM BdST

rtnn ঢাকা, ০১ এপ্রিল (আরটিএনএন ডটনেট)-- উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১ লাখ ২৪ হাজার পরীক্ষার্থী বেড়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি দেশে শিক্ষার পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে বলেই প্রমাণ করে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

নাহিদ বলেন, যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন পরীক্ষা অনেক বেশী সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে।

তিনি বলেন, সারা দেশে সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও প্রতি বছরই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।

পরীক্ষার কেন্দ্রে বিদ্যুৎ না থাকা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।

শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের ফলে এখন আমরা সুফল পেতে শুরু করেছি।’

নকলকে প্রায় নির্মূল করা হয়েছে দাবি করে নাহিদ বলেন, নকল হলেই কেন্দ্র বাতিল করা হবে। এর সঙ্গে কোনো শিক্ষক জড়িত থাকলে তার এমপিও বাতিল করা হবে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সারাদেশে একযোগে সকল কেন্দ্রে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। দুপুর ১টায় শেষ হয় বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষা।


উল্লেখ্য, এবছর উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সাত লাখ ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এদের মধ্যে ৪ লাখ ৪৬৪ জন ছাত্র ও ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৯০৯ জন ছাত্রী।

http://rtnn.net/details.php?id=23210&p=1&s=5

Thursday 25 March 2010

২০১৪ সালের মধ্যেই নিরক্ষর মুক্ত বাংলাদেশ দেয়া হবে: শিক্ষামন্ত্রী

Mon 22 Mar 2010 1:53 PM BdST

rtnnঢাকা, ২২ মার্চ (আরটিএনএন ডটনেট)-- আগামী ২০১৪ সালের মধ্যে সরকার নিরক্ষরতা দূরীকরণের পাশাপাশি সব শিশুর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। একই সঙ্গে ২০১১ সালের মধ্যে সব শিশুকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করার উদ্যোগের কথাও জানান তিনি।

সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে ইউনেস্কোর উদ্যোগে সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রমের পঞ্চম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে নিরক্ষরতা মুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও আমরা ২০১৪ সালের মধ্যেই সে লক্ষ্য অর্জন করতে চাই।

কেবল শিক্ষার হার বৃদ্ধিই সরকারের লক্ষ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সরকারে থাকতেই সব শিশুর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করবো।

নাহিদ বলেন, এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য সুবিধা বঞ্চিত এলাকায় নতুন করে দেড় হাজার বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। দারিদ্র্যের কারণে যেসব বিদ্যালয়ে ভর্তির হার কম সেসব বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার ও উপ-বৃত্তি প্রদান করা হবে।

এ সময় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার হ্রাস করতে বিদ্যালয়ে আনন্দময় পরিবেশ তৈরির উদ্যোগের কথাও জানান মন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, তিনদিনের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ৪০টি দেশের মোট ৭০ জন প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থার শিক্ষাকর্মীরা অংশ গ্রহণ করছেন।

আরটিএনএন ডটনেটে/আইএইচ/এমআই_ ১২৫০ ঘ.

http://rtnn.net/details.php?id=22845&p=1&s=5

Thursday 18 March 2010

সংশোধিত বাজেটবিদ্যুতে অগ্রাধিকার, তবু বরাদ্দ কমল হাজার কোটি টাকা

Kalerkantho | ঢাকা, শুক্রবার, ৫ চৈত্র ১৪১৬, ২ রবিউস সানি ১৪৩১, ১৯ মার্চ ২০১০

আবদুর রহিম হারমাছি

সংশোধিত বাজেটবিদ্যুতে অগ্রাধিকার, তবু বরাদ্দ কমল হাজার কোটি টাকা আবদুর রহিম হারমাছিবিদ্যুৎ খাতকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা মুখে বললেও সরকারের কর্মকাণ্ডে এর কোনো প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে না।

চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, সংশোধিত বাজেটে এর থেকে এক হাজার ৫৯ কোটি টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিদ্যুৎ খাতের কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও দরপত্র ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
চলতি ২০০৯-১০ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের ডিসেম্বর '০৯ পর্যন্ত সময়ের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষণসংক্রান্ত প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী সংশোধিত বাজেটের যে রূপরেখা (ধারণা) দিয়েছেন, তাতে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়লেও বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তিনি।
সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতের মোটা অঙ্কের বরাদ্দ কমানোর এ ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক দুই উপদেষ্টা আকবর আলি খান ও এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তাঁরা বলেছেন, এমনিতেই এবারের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এরপর তা থেকে বরাদ্দ কমালে বিদ্যুৎ খাতের সমস্যার সমাধান না হয়ে সংকট আরো ঘনীভূত হবে। বিদ্যুৎ খাতের বরাদ্দ কেন কমানো হচ্ছে_এ প্রশ্নের জবাবে গত বুধবার অর্থমন্ত্রী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাজেট সংশোধন হবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রতিবারই এটা হয়। এক খাতের টাকা খরচ না হলে অন্য খাতে যাবে_এটা নতুন কিছু নয়। বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ কেন কমানো হচ্ছে, সেটা আমি প্রতিবেদনে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছি।'
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিদ্যুৎসহ অন্য কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও এ অর্থবছরে দরপত্র ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ কমবে। তবে আগামী অর্থবছরে চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত অর্থ জোগান দেওয়া হবে।
জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেট বাস্তবায়নসংক্রান্ত এ অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার তিন হাজার ২৯৬ কোটি টাকা কমে এক লাখ ১০ হাজার ৫২৩ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। মূল বাজেটের আকার ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ কমা প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, এমনিতেই বিদ্যুৎ খাতে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ কম দেওয়া হয়েছিল। এরপর ওই কম বরাদ্দ থেকে আরো কমানোর ফলে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান তো হবেই না, উল্টো সংকট আরো ঘনীভূত হবে।
নির্বাচনী ইশতেহারে সরকার ২০১৩ সালের মধ্যে সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বলে অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ কমার ফলে সরকারের সে অঙ্গীকার পূরণ করতে পারবে কি না, তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন আকবর আলি খান।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের কাজের ধীরগতির কারণেই বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। এর ফলে দেশে বিদ্যুৎ সংকট আরো বাড়বে।
বর্তমানে দেশে গড় বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যমান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে প্রায় তিন হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।