Saturday 22 January 2011

দাম বেড়েছে চাল আটা রসুন ও ভোজ্যতেলের : এক বছরে মোটা চালে বেড়েছে ৩৯ শতাংশ : টিসিবি

রেজাউল হক কৌশিক

প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যেই বিরাজ করছে অস্থিরতা। কিছুতেই নামানো যাচ্ছে না দ্রব্যমূ-ল্যের ঊর্ধ্বগতি। সরকারের বারবার হুশিয়ারি সত্ত্বেও দাম কমার পরিবর্তে প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে। ভরা মৌসুমেও দেশের প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম বেড়েই চলেছে। সরকারিভাবে পরিকল্পিত বাজার মনিটরিং না থাকা, কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি, ধান-চাল মজুত এবং আমদানি না থাকাকে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে একজন অন্যজনের ওপর দোষ চাপালেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সরকার। এতে উচ্চ আয়ের মানুষের তেমন সমস্যা না হলেও হিমশিম খাচ্ছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। গত সপ্তাহের তুলনায় চাল, আটা, ময়দা, ছোলা, রসুন, সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখন আমনের ভরা মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও না কমে প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে চালের দাম। উত্পাদন, পর্যাপ্ত মজুত এবং সারাদেশে ওএমএসের মাধ্যমে সরকার চাল বিক্রি শুরু করলেও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়ছে না। বাজারে নতুন চাল উঠলে পুরান চালের দাম কমার প্রবণতা স্বাভাবিক নিয়ম হলেও এ বছর তার ব্যতিক্রম কেন হচ্ছে এর সঠিক ব্যাখ্যা কেউই দিতে পারছে না। একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। চালসহ কোনো দ্রব্যমূল্যের ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেই সরকারের।
মিলারদের অতিরিক্ত ধান-চাল মজুত, পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণ সুবিধা, গুদামে ধান-চাল আটকে রেখে অতি মুনাফা করার প্রবণতা ইত্যাদির কারণে চালের দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দাম বাড়ার বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য সরকার আগামী সপ্তাহে একটি কমিটি করবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়াও চলতি মাসেই মজুতবিরোধী আইন হবে বলে জানা গেছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিনিকেট চাল পাইকারি ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা, খুচরা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা; পাইজাম পাইকারি ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা, খুচরা ৪০ থেকে ৪২ টাকা; লতা পাইকারি ৪০ থেকে ৪৪ টাকা, খুচরা ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা; পারি পাইকারি ৪০ থেকে ৪২ টাকা, খুচরা ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা; নাজির পাইকারি ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, খুচরা ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা; স্বর্ণা পাইকারি ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা, খুচরা ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা; হাসকি পাইকারি ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা, খুচরা ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা, মোটা চাল পাইকারি ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা, খুচরা ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়। ঠিক এক বছর আগে এই চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ২৬ থেকে ২৮ টাকা। টিসিবি’র তথ্য মতে, গত এক বছরে শুধু মোটা চালের দামই বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবেও এক বছরে চালের গড় দাম বৃদ্ধি ২৪ শতাংশ।
চালের আড়তদাররা বলছেন, চালকলগুলো বিপুল পরিমাণ চাল গুদামজাত করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়াচ্ছে। আর চাতাল ও মিল মালিকরা বলছেন, আড়তদার ও পাইকাররা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে চালের দাম বাড়াচ্ছে। এভাবে একে অপরের ওপর দোষ চাপালেও সরকারিভাবে বাজারে মজুত তদারকি এবং সমগ্র বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় এভাবে চালের দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কোন মিলের কত মজুত, ধান থেকে চাল করা এবং সেই চালের কত পরিমাণ বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে তার কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই।
এদিকে চালের সঙ্গে আটা ময়দার দামও বেড়েছে। প্যাকেট আটা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, খোলা আটা ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা, প্যাকেট ময়দা ৩৯ থেকে ৪০ টাকা, খোলা ময়দা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। গত এক সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি আটায় বেড়েছে দুই থেকে তিন টাকা এবং এক মাসের তুলনায় বেড়েছে ছয় থেকে সাত টাকা।
চাল ও আটা ছাড়াও এ সপ্তাহে বেড়েছে সয়াবিন তেল, ডাল, চিনি ও তরিতরকারির দাম। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। মশুর ডাল মানভেদে ১০০ থেকে ১১৪ টাকা। রসুন দেশি ভালোটা ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং সাধারণ মানের ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি । শুকনা মরিচ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, প্রতি কেজি গুঁড়া হলুদ বিক্রি হয়েছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা, ছোলা ৪৫ টাকা। প্রতিকেজি পুরাতন আদা বিক্রি হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় এবং নতুন আদা ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। জিরা প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, এলাচ ২ হাজার ৯০০ টাকা, মোটাদানার এলাচ ৩ হাজার টাকা, দারুচিনি ২২০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, কেজিপ্রতি লবণ ২০ টাকা, প্রতি হালি মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৪ টাকা।
এদিকে শীত মৌসুম হওয়ার পরও সবজির দাম কম নয়। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন (গোল) বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আলু ১৩ থেকে ১৫ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পাতাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পেঁপে ১০ থেকে ১২ টাকা, শসা ২৪ থেকে ২৫ টাকা, শিম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ১৬ থেকে ১৮ টাকা। এছাড়া টমেটো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে।
এদিকে মাছ গোশতের বাজারও রয়েছে চড়া। গোশতের মধ্যে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২৫ টাকা, দেশি মুরগি প্রতি পিস ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, গরুর গোশত ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা ও খাসির গোশত ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। মাছের মধ্যে রুই প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, ইলিশ প্রতি কেজি ৪৭৫ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে অন্যান্য দ্রব্যের মতো দাম বেড়েছে খোলা সয়াবিন ও পামঅয়েলের। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাবে গত সপ্তাহের তুলনায় গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সয়াবিনে ১ থেকে ২ টাকা বেড়ে ৯৮ টাকা এবং পামঅয়েল ৮৮ টাকা কেজি নির্ধারিত থাকলেও বিক্রি হয়েছে আরও বেশি দামে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হতে দেখা গেছে ১০০ টাকা দরে। আর পাম সুপার তেল ৯৩ টাকা লিটার দরে। রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মো. আলী ভুট্টো জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেশি। আর দেশে ভোজ্যতেলের বাজার পুরোপুরিই আমদানিনির্ভর। তাই বিশ্ববাজারে দাম না কমলে দেশীয় বাজারে দাম কমার সম্ভাবনা কম।
বোতলজাত তেলের মধ্যে পাঁচ লিটারের বোতল ৫০৫ থেকে ৫১০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এক লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১০২ থেকে ১০৪ টাকা দরে। রূপচাঁদা, তীর, ফ্রেশ, মুসকান, পুষ্টিসহ প্রায় সব কোম্পানির তেলের দামই এক দেখা গেছে।
এগুলো ছাড়াও গত মাসের তুলনায় প্যাকেটজাত ডানো গুঁড়ো দুধ প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫৫ থেকে ৪৭০ টাকায়, ডিপ্লোমা (নিউজিল্যান্ড) একইভাবে বেড়ে একই দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্যাকেটজাত ফ্রেশ ও মার্কস গুঁড়ো দুধ গত মাসের তুলনায় ১০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩৯০ থেকে ৪০০ টাকায়।

Friday 7 January 2011

সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ : ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের লাগাতার কর্মসূচি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হোসেন তাহের ইমাম (এইচটি ইমাম) প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় দাবি আদায়ে লাগাতার কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের নেতারা। গতকাল সকালে সম্মিলিত পরিষদের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় প্রতিশ্রুতি থেকে সরকার সরে যাওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।
সভায় নেতারা বলেন, শিক্ষানীতি সংশোধন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মো. আফজলের অপসারণের দাবি ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের ২৬ ডিসেম্বর আহূত হরতাল স্থগিত করা হয়; কিন্তু সরকারের প্রতিনিধি এইচটি ইমাম তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছেন। যার ফলে বাধ্য হয়ে লাগাতার কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, ভাসানী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মোমতাজ চৌধুরী, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক, পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ড. মাওলানা খলীলুর রহমান মাদানী, এনডিপি মহাসচিব আলমগীর মজুমদার প্রমুখ। ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সব দল, গোষ্ঠী ও তাওহিদি জনতাকে আগামীতে যে কোনো ধরনের কঠোর কর্মসূচিতে সক্রিয় হওয়ার জন্য তারা আহ্বান জানান।

লাগামহীন বাজারে ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষ : চাল আটা তেল পেঁয়াজ চিনির দাম আরও বেড়েছে



সৈয়দ মিজানুর রহমান

এক কেজি মোটা চাল এখন ৩৮ টাকা, খোলা আটা ৩৬ টাকা আর চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। শুধু চাল, চিনি আর আটাই নয়, এক লিটার লুজ সয়াবিনের দাম ঠেকেছে ১০০ টাকায়, পাম অয়েল ৯০ টাকা, পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৫৭ টাকা। নিত্যপণ্যের এমন চড়া দামে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। আবার কেউ কেউ চড়া দামে এসব পণ্য কিনতেই পারছেন না। তবে সরকারের দাবি—বাজার নিয়ন্ত্রণেই আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন
অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর বাজার দর অনুসন্ধান ও গবেষণা সেল সূত্রে জানা গেছে, চাল, চিনি, আটা, ময়দা, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রেখে যাওয়া বাজার দরকেও টপকে গেছে। এসব পণ্যের দাম গত দুই বছরের ব্যবধানে কোনোটি দ্বিগুণ, আবার কোনোটির দাম তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে।
গতকাল সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চাল (স্বর্ণা বা চায়না ইরি) বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা কেজি। টিসিবি’র তথ্যমতে, মোটা চালের দাম গত এক বছরে প্রায় ৩২ শতাংশ বেড়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ দিন ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি বাজারে মোটা চাল ২৭ থেকে ২৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় বলে জানায় টিসিবি।
টিসিবির তথ্যমতে, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়। তবে ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি এ মানের চালের দাম ছিল ৩৩ থেকে ৩৮ টাকা। পলাশীমোড় কাঁচাবাজারের চাল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, গতকাল খুচরা প্রতি কেজি নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা। আর উত্তম মানের নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৫১ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে।
বাজারে এক কেজি খোলা আটার দাম এখন ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। তবে টিসিবি’র দাবি, গতকাল খুচরা বাজারে খোলা আটা বিক্রি হয়েছে ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা কেজি। তবে এ মানের আটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ দিন ২৩ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় বলে জানায় টিসিবি। প্যাকেটজাত আটা বর্তমানে প্রতি কেজি ৩৭ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বাজারে প্রতি কেজি খোলা ময়দার দাম এখন ৩৬/৩৮ টাকা। দুই বছর আগে খোলা ময়দা বিক্রি হয়েছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা দরে। টিসিবি জানিয়েছে, ময়দার দাম এক বছরের ব্যবধানে ১৭ শতাংশ বেড়েছে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, প্রতি লিটার লুজ সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। টিসিবির হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে লুজ সয়াবিনের দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশ। সব শেষ গত ২৮ ডিসেম্বর প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম ২ টাকা পর্যন্ত বাড়ে বলে জানিয়েছে টিসিবি। তবে ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে লুজ সয়াবিন ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় বলে জানায় টিসিবির বাজার দর অনুসন্ধান ও গবেষণা সেল।
বাজারে পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে এখন প্রতি লিটার ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে। তবে লুজ পামঅয়েল প্রতি লিটার ৮৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানায় টিসিবি। টিসিবির হিসাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষদিন বাজারে পামঅয়েল বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা দরে। পামঅয়েলের দাম এক বছরের ব্যবধানেই প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানায় টিসিবি।
২০০৯ সালের শুরুর দিকে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৪ টাকা। তবে এখন চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। অবশ্য টিসিবি বলছে, চিনির দর গত এক সপ্তাহে বেড়ে ৫৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি জানায়, চিনির দর গত এক বছর ধরেই চড়া।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, আবার উত্তাপ বাড়ছে পেঁয়াজের বাজারে। পেঁয়াজের দর এক মাসে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। টিসিবি জানায়, গতকাল আরেক দফা দেশি পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। দেশি পেঁয়াজ এখন ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দর ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা। এ তথ্য টিসিবির। সে সময় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩২ থেকে ৩৬ টাকা দরে। টিসিবি জানিয়েছে, আমদানি করা পেঁয়াজের দর অস্বাভাবিক চড়া থাকায় এর ক্রেতা নেই। ফলে গতকাল টিসিবির বাজারদর তথ্যে আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্যও স্থান পায়নি।
বাজারে এক কেজি রসুনের দর এখন ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রসুনের দর ছিল ২৪ থেকে ৩২ টাকা কেজি। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রতি কেজি রসুনের দর বেড়েছে ১৫৬ টাকা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন এটা নজিরবিহীন। তবে রসুনের দর এত অস্বাভাবিক বাড়লেও, এ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির কারণ ক্ষতিয়ে দেখেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা সরকারের অন্য কোনো সংস্থা।
নিত্যপণ্যের চড়া দর হলেও, সরকারের তরফ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণেই আছে।
খোলা তেল-চিনি বেচা যাবে না : ভোজ্যতেল ও চিনি ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এ দুটি পণ্য বিক্রিতে প্যাকেটজাত বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এ ছাড়া তেল ও চিনি বিক্রি এবং বাজারজাতে ডিও (চাহিদাপত্র) প্রথা তুলে দিয়ে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে পরিবেশক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্যতেল ও চিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান। বাণিজ্য সচিব সাংবাদিকদের জানান, এ সিদ্ধান্ত এখনও কার্যকর হয়নি। তবে মঙ্গলবার এ নিয়ে বৈঠক হবে। বৈঠকের পর থেকে সার্কুলার জারি করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে। তবে ডিলার অথবা পরিবেশকের মাধ্যমে তা বিক্রি করতে হবে কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি আরও বলেন, ভোজ্যতেল ও চিনি বাজারজাতকরণে প্রচলিত ডিও প্রথা বাতিলের ব্যাপারে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন, অতিরিক্ত সচিব এম মর্তুজা রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশ ট্যারিপ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান, আমদানি-রফতানি অধিদফতরের প্রধান নিয়ন্ত্রক এমএ সবুর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিয়া, ভোজ্যতেল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি রউফ চৌধুরী এবং ভোজ্যতেল ও চিনি পরিশোধনের মিল মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, কিছু কিছু জটিলতা থাকায় বৈঠকে উত্পাদনকারীরা ডিলারশিপের মাধ্যমে ভোজ্যতেল ও চিনি বিক্রির পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। নিত্যপণ্যের দর চড়া হওয়ার পেছনে পাইকারি, খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদেরও দায়ী করেন বাণিজ্য সচিব