Friday 31 December 2010

ওলামা পরিষদ : সরকারের ওয়াদা ভঙ্গের প্রতিবাদে কাল বিক্ষোভ সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার

জাতীয় শিক্ষানীতি সংশোধন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মো. আফজলের অপসারণের দাবি ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের প্রতিশ্রুত অবস্থান থেকে সরে যাওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল রাজধানীতে আবারও বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সম্মিলিত ওলামা পরিষদ। আগামীকাল বাদ জুমা মুক্তাঙ্গনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় সরকারপক্ষের দেয়া আশ্বাস তথা সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিবাদে ওই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় জানানো হয়েছে।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, পরিষদ নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদিন, ভাসানী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মোমতাজ চৌধুরী, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, এনডিপি মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, পরিষদের মহানগরী সভাপতি মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সেক্রেটারি মাওলানা সালেহ সিদ্দিকী, মাওলানা আবদুছ ছবুর মাতুব্বার, মাওলানা মুহাম্মদ ফাহিম ছিদ্দীকী, মুফতি মাওলানা নাছির উদ্দিন, মোফাচ্ছির মাওলানা মুহাম্মদ কামরুল হাসান, মাওলানা আবুল হাসান প্রমুখ। নেতারা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সব দল, গোষ্ঠী ও তাওহিদি জনতাকে ৩১ ডিসেম্বর মুক্তাঙ্গনে অনুষ্ঠিতব্য প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলকে সফল করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।

Wednesday 29 December 2010

তিনি কসম খেয়েছিলেন - ওলামা পরিষদ : ওলামা পরিষদের অধিকাংশ দাবি অযৌক্তিক - এইচটি ইমাম



রকিবুল হক

দফায় দফায় আলোচনা ও অনুরোধের প্রেক্ষিতে হরতাল স্থগিত করার এক দিনের মাথায় সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের দাবি-দাওয়ার অধিকাংশই অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। গতকাল তিনি বলেন, ওলামা পরিষদের দাবি পূরণের কোনো আশ্বাস দেইনি। তাদের দাবি নিয়ে আলোচনার কথা বলেছি। অপরদিকে এইচটি ইমামের এই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ওলামা পরিষদ নেতারা। তারা বলেন, দাবি পূরণের ব্যাপারে উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে কসম করেছেন। তার ওয়াদা এবং অনুরোধ অনুযায়ী হরতাল স্থগিত করা হয়েছে। এখন অস্বীকার করলে তা অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। তার এই বক্তব্যের বিষয়ে ওলামা পরিষদের পক্ষ থেকে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। অপরদিকে হরতাল স্থগিত করা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ওলামা পরিষদ।
সূত্রমতে, সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া জাতীয় শিক্ষানীতিকে ধর্মহীন আখ্যায়িত করে এটি সংশোধন, ইমামদের অনুষ্ঠানে মার্কিন তরুণ-তরুণীদের নিয়ে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শনের অভিযোগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির অপসারণ এবং ’৭২ সালের সংবিধানে ফেরার নামে ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে ৮ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ২৬ ডিসেম্বর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ। এ ঘোষণার পর থেকেই হরতাল প্রত্যাহার করাতে ওলামাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন সরকারের প্রতিনিধিরা। এর অংশ হিসেবেই প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের সঙ্গে ওলামাদের ৩ দফা বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে তাদের দাবি-দাওয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস প্রদান করা হয়। সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর রাতে এইচটি ইমামের বাসায় ওলামাদের বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। এ প্রেক্ষিতেই শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হরতাল স্থগিত করার ঘোষণা দেয় ওলামা পরিষদ। ওই সংবাদ সম্মেলনে পরিষদ নেতা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন ভালোভাবে উদযাপন এবং দাবি-দাওয়া পূরণের ব্যাপারে সরকারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তাদের অনুরোধেই হরতাল স্থগিত করা হয়। তবে এক মাসের মধ্যে এসব দাবি না মানা হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে পরিষদ।
এদিকে ওলামা পরিষদের এই ঘোষণার এক দিনের মাথায় গতকাল একটি সংবাদ সংস্থার সঙ্গে সাক্ষাত্কারে প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন ও প্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ওলামাদের ঘোষণাকে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের দাবি-দাওয়ার অধিকাংশই অযৌক্তিক। দু-একটি প্রস্তাবনা গ্রহণযোগ্য। এগুলোকে বিবেচনা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের ডাকা রোববারের হরতালে একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধন ছিল। অকারণে তারা সমর্থন দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করছিল। তা আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছি। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে গৃহীত জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯-এর মূল স্তম্ভ নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। এই শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। এটি গ্রহণযোগ্য নীতি নয় বললেই তো আর পরিবর্তন করা যায় না।
সরকারের আশ্বাসে ২৬ ডিসেম্বর ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের ডাকা হরতাল স্থগিত করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করার বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওরকম কোনো আশ্বাসের কথা বলিনি। বলেছি, তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। এটা নিয়ে কেবিনেটে, সংসদে আলোচনা হবে। তারপর ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করব। ইফার ডিজিকে অপসারণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে এইচটি ইমাম বলেন, তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেব। উল্লেখ্য, হরতালকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক নাশকতা হতে পারে, গোয়েন্দাদের এমন রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ৭ ডিসেম্বর থেকেই এই হরতাল প্রত্যাহার করাতে সরকার নানা রকম চেষ্টা শুরু করে।
এদিকে এইচটি ইমামের এই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, এইচটি ইমামের বক্তব্য সম্পর্কে আজ আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়া হবে। তবে তিনি বলেছেন, উপদেষ্টা শিক্ষানীতির মৌলিক বিষয় সংশোধনে আলাপ-আলোচনার কথা বলেছেন। তার কথার ভিত্তিতেই হরতাল প্রত্যাহার করেছি। এখন যদি তিনি অস্বীকার করেন তাহলে তা দুঃখজনক এবং রাজনৈতিক অসাধুতা হিসেবে গণ্য হবে। তার মতো একজন দায়িত্বশীল এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে এখন অস্বীকার করার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রেসনোট দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। তবে ওলামাদের সঙ্গে বৈঠকের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার কাজ করবে বলে তিনি আশা করেন।
এ বিষয়ে ওলামা পরিষদের জয়েন্ট সেক্রেটারি ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, এইচটি ইমাম দাবি পূরণের ব্যাপারে ৩ বার কসম করেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘পর্যায়ক্রমে শিক্ষানীতি সংশোধন করা হবে। ইফা ডিজির অপসারণ বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া হবে। এসব বিষয়ে এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আপনারা হরতাল প্রত্যাহার করেন, সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ তিনি বলেন, আমাদের দাবির বিষয়ে সরকারিভাবে একটি ঘোষণা দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। রোববারের মধ্যে কোনো ঘোষণা না এলে আজ পরিষদের বৈঠকের মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও ড. মাদানী জানান।
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ : এদিকে জাতীয় শিক্ষানীতি সম্পর্কে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে হরতাল স্থগিত করেছে মর্মে প্রদত্ত আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ। এ বিষয়ে গতকাল পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় বলা হয়, এতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে হরতাল আহ্বান এবং স্থগিত সম্পর্কিত সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ নেতাদের আলোচনা সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর নিদারুণ অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
সভায় আরও বলা হয়, পরিষদ নেতারা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠককালে পরিষদের দৃষ্টিতে জাতীয় শিক্ষানীতির ত্রুটি-বিচ্যুতি পেশ করা হয়। তারা পরিষদ নেতাদের বক্তব্য অত্যন্ত ধৈর্যসহ শোনেন এবং কোনো বাধ্যবাধকতা বা শর্তারোপ করেননি। জাতীয় শিক্ষানীতির ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণার্থে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস প্রদানের প্রেক্ষিতে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ তাদের হরতাল স্থগিত ঘোষণা করে। আইনমন্ত্রী ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানের ভাষায় শিক্ষানীতি সম্পর্কে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে পরিষদ হরতাল স্থগিত করেনি—হরতাল স্থগিত করা সম্পর্কে তাদের বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তির বেড়াজাল সৃষ্টি করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের এক সূক্ষ্ম কৌশল বৈ আর কিছুই নয়।
তারা বলেন, শিক্ষানীতির সংশোধন ও ইফার বিতর্কিত ডিজির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রশ্নে আমরা আমাদের দাবিতে অটল আছি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যদি সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ হরতালের পাশাপাশি যে কোনো বড় ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করলে উদ্ভূত ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে

মোটা চালের কেজি ৩৮ টাকা ফাঁপরে নিম্ন আয়ের মানুষ

সৈয়দ মিজানুর রহমান

বাজারে এখন এক কেজি মোটা চালের দাম ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা। ৩৬ টাকা দরে যে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে তার মান খুব একটা ভালো না। তবে মান ভালো না হলেও কিছুই করার নেই গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষের।
চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা বাজারে এখন ৩৮ টাকা কেজি দরে মোটা চাল (স্বর্ণা বা চায়না ইরি) বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এ মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা দরে। গত সাত দিনে প্রতি কেজি মোটা চালের দর বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন গতকাল আমার দেশকে জানান, পাইকারি চালের আড়তে গত কয়েক দিন ধরেই দর ঊর্ধ্বমুখী। আড়তে সাত দিনের মাথায় প্রতি বস্তা মোটা চালের দর বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। তিনি দাবি করেন, মিলাররা চালের মজুদ গড়ে তুলছে। ফলে আড়তে মোটা চালের আমদানি কম। এ কারণে দাম বাড়ছে।
বাদামতলীর চাল ব্যবসায়ী আকবর হোসেন জানান, শুধু মোটা চালই নয়, গত কয়েকদিন ধরে সব ধরনের চালের দরই বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘সরকারের হাতে চালের খুব একটা মজুদ নেই’—এমন খবর ছড়িয়ে রাইসমিলগুলো বাড়তি ফায়দা লুটছে। মিল থেকে চাল সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে গত কয়েক দিনে মোটা চালের দরই বেশি বেড়েছে বলে জানান পাইকারি চাল বিক্রেতা আকবর হোসেন।
সরকারি বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) বাজার দর অনুসন্ধান ও গবেষণা সেল সূত্র জানিয়েছে, গত সাত দিনের মাথায় মোটা চালের দর কয়েক দফায় বেড়েছে। টিসিবি জানিয়েছে, গত এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দর বেড়েছে ৪০ শতাংশ।
টিসিবি’র দাবি, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা দরে। গত এক মাসে মোটা চালের দর বেড়েছে ৮ শতাংশ। টিসিবি’র তথ্য তুলে ধরে মোটা চালের দর জানতে চাইলে পলাশী মোড় কাঁচা বাজারের চাল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন আমার দেশকে বলেন, ৩৮ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই। টিসিবি মোটা চালের দর ৩৪-৩৬ টাকা বললেও বাস্তবে এ দরে রাজধানীর কোনো বাজারেই মোটা চাল মিলছে না বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী। তবে অতি নিম্নমানের মোটা চাল ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা দরে পাওয়া যায় বলে জানান তিনি। এ মানের চালের ক্রেতা খুবই কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা কেজি। ভালো মানের নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হয় ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি। তবে টিসিবি জানিয়েছে, মিনিকেট ও নাজির চাল বিক্রি হয় ৪৪ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
পাইজাম ও লতা মানের চাল গতকাল বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে। তবে টিসিবি বলছে, এ মানের চাল গতকাল ৩৯ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
টিসিবি’র হিসাবে ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাজারে এক কেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৬ টাকা দরে। সে সময় মোটা চালের দর ছিল ১৭ থেকে ১৯ টাকা কেজি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার চাল কলগুলোতে যে দরে চাল বিক্রি হচ্ছে, রাজধানীর বাজারে এখন সে চাল প্রতি কেজিতেই ৯ থেকে ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে বাবুবাজারের চালের আড়তদার আনসার হোসেন বলেন, ‘চালের বাজারে এখন শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই। ভারতে দর বাড়ার খবর বেরুলেও এখানে দাম বেড়ে যায়। আবার সরকারের কাছে মজুদ নেই, এমন তথ্যও মিলাররা জানেন। বাজারে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা।’
দেশীয় মিনিকেট চালের প্রধান উত্সস্থল কুষ্টিয়া। গতকাল কুষ্টিয়ার একটি রাইস মিল মালিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তারা কেন চাল মজুদ করছেন? জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ চাল ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি হচ্ছে। নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠন চাঁদা তুলছে। বেড়ে গেছে ট্রাক ভাড়া। ট্রাক নিয়ে আড়তে ঢুকতে গেলেও চাঁদা গুনতে হচ্ছে।’ এসব কারণে দাম বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, শেরপুর, রাজশাহী ও নাটোরসহ বিভিন্ন জেলার রাইস মিলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ধান বা চালের কোনো ঘাটতি নেই। তার পরও কেন চালের বাজার চড়া—জানতে চাইলে বাবুবাজারের আরেক চাল বিক্রেতা ফয়সাল মোল্লা জানান, চালের দর বাড়লে কৃষকের কোনোই লাভ নেই। এখন বাজারে যেসব চাল আসছে, সেগুলো মিলাররা মজুদ রেখেছিলেন। তাদের হাতে ধানের অভাব নেই। এছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীরাও বাড়তি ফায়দা লুটছে।

Tuesday 28 December 2010

দাবি বাস্তবায়নে টালবাহানার পরিণতি শুভ হবে না : ওলামা পরিষদ

স্টাফ রিপোর্টার

সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের নেতারা বলেছেন, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বর্জিত জাতীয় শিক্ষানীতির সংশোধন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি. শামীম মো. আফজালের অপসারণ ও যথোপযুক্ত শাস্তি বিধান, ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ এবং সংবিধান থেকে ‘মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণাঙ্গ আস্থা’র বিষয়টি মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে ২৬ ডিসেম্বর হরতাল কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বেশ ক’বার পরিষদ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরিষদ উত্থাপিত যুক্তিযুক্ত দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে মর্মে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এবং প্রেসনোট আকারে তা জাতিকে জানানো হবে-এমন নিশ্চয়তার প্রেক্ষিতেই ওই হরতাল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু সরকার পক্ষ এখন তাদের দেয়া ওয়াদা থেকে সরে গিয়ে যে তালবাহানার আশ্রয় গ্রহণ করেছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং রাজনৈতিক অসততা ও মোনাফেকির শামিল। এ ধরনের শঠতা ও ওয়াদা ভঙ্গের পরিণতি শুভ হবে না বলে পরিষদ নেতারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
গতকাল বিকালে ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মাওলানা যাইনুল আবেদীন, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, আলমগীর মজুমদার, মাওলানা আহমেদ আলী কাসেমী, মমতাজ চৌধুরী প্রমুখ। সভায় উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে সরকারের পক্ষে তার প্রদত্ত ওয়াদা বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় সম্মিলিত ওলামা-মাশায়েখ পরিষদ আবারও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
এদিকে শিক্ষানীতি সংশোধনসহ অপরাপর দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সূচিত আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতিতে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন, আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখের সঙ্গে মতবিনিময় সভার প্রথমদিনে গতকাল মাগরিব বাদ বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয়।