Wednesday 29 June 2011

তিন বছরে পিপিপি : বাস্তবায়ন শূন্য বরাদ্দ ৮ হাজার কোটি টাকা

সৈয়দ মিজানুর রহমান
বাজেটে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় বিনিয়োগের ব্যাপক আশাবাদ প্রচার করা হলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি নেই। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে পিপিপি নামে ২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। চলতি ২০১০-২০১১ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ আছে ৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে এই খাতে আবারও ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ থাকলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়নের হার শূন্য। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পর পর দু’টি বাজেট বক্তৃতায় পিপিপিকে নতুন খাত হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার পিপিপিকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে বরাদ্দ রাখলেও, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের স্পষ্ট ধারণা দেয়া হচ্ছে না। বাজেটের বরাদ্দ কোত্থেকে কিভাবে খরচ হবে তাও বলা হচ্ছে না। এ বিষয়ে এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী গতকাল আমার দেশকে বলেন, পিপিপি যে একেবারে নতুন ধারণা তা ঠিক না। বহু আগে থেকেই পিপিপি’র মাধ্যমে কাজ হয়ে আসছে। তবে বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে তা নতুন। বাজেটে আগে পিপিপি নামে আলাদা কোনো খাত ছিল না। গত অর্থবছরেই আলাদা খাত হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়।’ কেন পিপিপিতে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া নেই, বরাদ্দের এক টাকাও কেন খরচ হয়নি জানতে চাইলে সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘এটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়েছে। সঠিক নির্দেশনা নেই। ব্যবসায়ীরা জানেন না কিভাবে এই খাতে রাখা বরাদ্দ থেকে টাকা পাওয়া যাবে।’অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গত ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিখাতকে নিম্ন বা বিনা সুদে ঋণ অথবা মূলধন সহায়তা হিসেবে দেয়ার জন্য পিপিপি খাতে আড়াই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থেকে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকার একটি বিনিয়োগ তহবিল গঠন করার কথা ছিল। এছাড়া স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি নির্মাণে সহায়তার জন্য ৩০০ কোটি টাকার একটি মূলধন গঠনের কথা ছিল। তবে ২০১০-২০১১ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছেন, পিপিপির এই বরাদ্দ খরচ করা যায়নি। তার পরও তিনি ২০১০-২০১১ অর্থবছরে বাজেটে পিপিপিতে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দেন। তবে অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে এসে একটি টাকাও খরচ করা যায়নি এই খাত থেকে। এরই মধ্যে ২০১১-২০১২ অর্থবছরের বাজেটে পিপিপিতে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাজেটে পিপিপিতে ২৩টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিদ্যুত্ খাতে সিরাজগঞ্জে ৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, চট্টগ্রামে ১ হাজার ৩২০, মেঘনা ঘাটে ৪৫০, সিদ্ধিরগঞ্জে ৩০০-৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট। এছাড়াও রয়েছে চট্টগ্রামে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ এবং পরিবহন খাতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ভৌত পরিকল্পনা খাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় মার্কেট নির্মাণ, পার্ক উন্নয়ন এবং নতুন আবাসিক এলাকা নির্মাণ, বরিশালে বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম নির্মাণ। স্বাস্থ্য খাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের জন্য এম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা এবং বড় হাসপাতালগুলোতে অটোমেশন সার্ভিস প্রবর্তন প্রকল্প।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে আবারও পিপিপির আওতায় ১৬টি প্রকল্প যোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্প ধরা হয়েছে রাজধানীর আশপাশে তিনটি স্যাটেলাইট শহর নির্মাণে। ১৩টি প্রকল্প ঠিক করা হয়েছে বিদ্যুত্ ও জ্বালানি খাতে। এগুলোর মধ্যে আছে চট্টগ্রামে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে সৌরবিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ, খুলনায় ২১০ মেগাওয়াট তাপ-বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ, ময়মনসিংহে ৩৬০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প ও ডিপিডিসির সাব-স্টেশন নির্মাণ।