Thursday 22 September 2011

জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিবৃতি : আবুল আসাদকে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেয়া সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য হুমকি

স্টাফ রিপোর্টার
দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক আবুল আসাদকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়ায় তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন। পৃথক বিবৃতিতে নেতারা বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আবুল আসাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একজন স্বনামধন্য সম্পাদককে গ্রেফতারের ঘটনা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি হুমকিস্বরূপ। গণতান্ত্রিক সমাজে কোনোভাবেই এটা কাম্য হতে পারে না। তারা অবিলম্বে আবুল আসাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি সরকার তার নিজস্ব প্রণীত আইন লঙ্ঘন করে সাংবাদিকদের ওপর হয়রানিমূলক আচরণ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২০ সেপ্টেম্বর দেশের প্রবীণ সাংবাদিক এবং দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধু গ্রেফতার করেই সরকার ক্ষান্ত হয়নি, তাকে নেয়া হয়েছে রিমান্ডে। এটা সাংবাদিক সমাজকে আরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে দীর্ঘকাল আটকে রেখে রিমান্ডে নির্যাতন করা হয়। এসব অনভিপ্রেত ঘটনা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বিকাশ, মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অন্তরায়। যেখানে সরকারের সাংবাদিকতা পেশায় পৃষ্ঠপোষকতা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদানের কথা—সেখানে প্রবীণ স্বনামধন্য একজন সম্পাদককে এভাবে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নির্যাতন চালানোর ঘটনায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি হুমকির নামান্তর। গণতান্ত্রিক সমাজে এ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সরকার সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের হয়রানি ও নিবর্তনমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকবে বলে তারা প্রত্যাশা ও দাবি করেন এবং অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানান।
সম্মিলিত পেশাজীবী ফোরাম সভাপতি অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শেখ আল আমিন এক বিবৃতিতে বলেন, সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সৃষ্ট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতি, দুর্নীতি, অনিয়ম, শেয়ারমার্কেট কেলেঙ্কারি, দেশ পরিচালনায় ব্যর্থতা, ভারতের সঙ্গে দেশবিরোধী চুক্তি, বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়নে জনজীবনে দুর্গতির বিষয়ে দেশের সাংবাদিকরা যখন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করছে, ঠিক তখনই সরকার সাংবাদিকদের স্তব্ধ করতে গ্রেফতার ও নির্যাতন শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বরেণ্য সাংবাদিক দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের এ দমন-পীড়নের প্রতিবাদ জানানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে পেশাজীবীদের সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
তারা বলেন, সাংবাদিকসহ পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, বিরোধী দল যাতে সরকারের অন্যায়, নির্যাতন ও দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে না পারে, সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে এর আগেও পুলিশ দিয়ে মামলা-হামলা, রিমান্ডের নামে নির্যাতন করা হয়েছে। সরকারের এই ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডে সরকার সমর্থক কিছু মানবাধিকার নেতা ও সাংবাদিক সমর্থন জুগিয়ে বানোয়াট রিপোর্ট পেশ করে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। এই দলটি যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই পেশাজীবীদের পেশাভিত্তিক কর্মকাণ্ড চালাতে বিশেষ করে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশবরেণ্য সম্পাদক আবুল আসাদকে গ্রেফতার করে বানোয়াট মামলায় রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এ অবস্থায় পেশাজীবীদের বসে থাকলে চলবে না, সর্বস্তরের জনগণের মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তারা বয়োবৃদ্ধ সাংবাদিক আবুল আসাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দ্রুত মুক্তির জোর দাবি জানান।
দৈনিক সংগ্রাম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের প্রতিবাদ সভায় অবিলম্বে সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদের মুক্তি দাবি করা হয়। এবিএম হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন মো. এনামুল হক, খন্দকার এমদাদুল হক, সেক্রেটারি কামরুল আহসান, আনোয়ার হোসেন, হাবিবুল্লাহ হাবীব, হাবিবুর রহমান খান ও গোলাপ হোসেন।