Saturday 24 July 2010

উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি যেন দূরের বাঁশি

ফারুক ইকবাল, ফিরোজ শিবলী ও ভূঁইয়া নজরুল, চট্টগ্রাম | কালের কণ্ঠ | ঢাকা, শনিবার, ৯ শ্রাবণ ১৪১৭, ১১ শাবান ১৪৩১, ২৪ জুলাই ২০১০

সব সরকারই বলে এসেছে, জাতীয় উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন অপরিহার্য। কিন্তু প্রতিটি সরকারের আমলেই উপেক্ষিত হয়েছে বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রামের উন্নয়ন। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংকট, জলাবদ্ধতা, চলাচলের অনুপযোগী রাস্তাঘাট, যানজট, শিল্প ও বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা সমস্যায় নগরবাসীর জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি কর্ণফুলীর তীর ঘেঁষে রিং রোড, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল এবং যানজট নিরসনে একাধিক ফ্লাইওভার নির্মাণ, পতেঙ্গা ও পারকিতে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সরাসরি রেল লাইন এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ পরিকল্পনার সুর নগরবাসীর কাছে দূরের বাঁশির মতো শোনায়। কেননা অনেক প্রত্যাশা সত্ত্বেও নতুন বাজেটে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে লালদীঘির জনসভায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব তিনি নিজ হাতে গ্রহণ করবেন। চট্টগ্রামের নবনির্বাচিত মেয়র এম মঞ্জুর আলমও তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক ও পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বরাবরের মতো এবারও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সেসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায় চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে।
চট্টগ্রামবাসী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সিকান্দার খান বলেন, 'আগের অভিজ্ঞতা থেকে এবারও কিছু প্রত্যাশা করছি না। তবে নতুন মেয়র এম মঞ্জুর আলম দায়িত্ব নিয়েছেন মাত্র, এখন তিনি কী করেন, তা দেখার অপেক্ষায় আছি।'
বিশিষ্ট আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, 'রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় গেলে কথা দিয়ে কথা রাখেন না। কিন্তু সমাজকর্মীরা কথা রাখার চেষ্টা করেন। নতুন মেয়র এম মঞ্জুর আলম একজন সমাজকর্মী হিসেবে ভোট পেয়ে ক্ষমতায় গেছেন বলে তিনি কী করেন, তা দেখার আশায় রয়েছি।' সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় ছাড়া চট্টগ্রামের উন্নয়ন সম্ভব নয় উল্লেখ করে স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, শুধু সমন্বয়ের অভাবেই বিগত সময়ে চট্টগ্রামের উন্নয়ন হয়নি। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সমন্বয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে মেয়রের বিশেষ ভূমিকা না থাকলেও তাঁর সহযোগিতা ছাড়া সেটা সম্ভবও নয়।
চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ মুহূর্তে চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধান ইস্যু বলা যায় ৯টি। সেগুলো হলো:
জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার কোটি টাকা কাগজে-কলমে
বন্দরনগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ সমস্যা নিরসনে হাজার কোটি টাকার পরিকল্পনা কাগজে-কলমে রয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে বেদখল হয়ে যাওয়া ২২টি প্রাকৃতিক খাল উদ্ধার ও ৩৩টি নতুন খাল খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এর কোনো অগ্রগতি নেই। ১৯৯৫ সালে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) মাস্টারপ্ল্যান এবং ২০০৭ সালে শেষ ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান করলেও বাস্তবে তা আলোর মুখ দেখেনি। এসব প্ল্যানে মহানগরীকে ১১টি জোনে বিভক্ত করে জলাবদ্ধতা নিরসনের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবে পরিণত হয়নি।
চউকের প্রধান প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, মাস্টারপ্ল্যান ও ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যানের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন দুটি খাল খনন এবং বিদ্যমান খালগুলোকে সংস্কার ও পুনর্বাসন করা না গেলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। আর খাল খননের কাজ করবে সিটি করপোরেশন।
নগরীর চারদিকে ঘিরে থাকা ২২টি বড় খাল দখল হয়ে গেছে অনেক আগে। খালগুলো হচ্ছে চাক্তাই, মির্জা, সদরঘাট, হিজরা, ত্রিপুরা ছড়া, শীতল ঝরনা, নোয়া, জেলেপাড়া খাল ইত্যাদি। এসব খাল দখলের ফলে টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর ৭০ শতাংশ এলাকা কোমর ও হাঁটুপানিতে ডুবে যায়।
নবনির্বাচিত মেয়র এম মঞ্জুর আলম তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেবেন বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন। এ জন্য 'জলাবদ্ধতা নিরসন বিভাগ' নামে নতুন একটি বিভাগ খোলা হবে বলে তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
পাহাড়ধস ও ঝুঁকিতে হাজার হাজার পরিবার
নগরীতে নির্বিচারে চলছে পাহাড় কাটা। স্থানীয় সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে থাকা প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে ইটখোলা ও আবাসন ব্যবসা করছে। এ ছাড়া পাহাড়গুলোতে গত দেড় যুগে কোনো বনায়ন হয়নি। ফলে প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত তিন বছরে পাহাড়ধসে প্রায় দেড় শ মানুষ মারা গেছে। বৃষ্টি হলে পাহাড়ে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষজন আতঙ্কে থাকে। নগরীর মতিঝরনার জিলিপি পাহাড়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের পাহাড়, একে খান পাহাড়, বায়েজীদ, কুমিরা, চট্টগ্রাম সেনানিবাসসংলগ্ন তিন নম্বর বাজার এলাকার পাহাড়, ফতেয়াবাদ চৌধুরীহাটের পশ্চিমের পাহাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে দরিদ্র লোকজন।
২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রাম সেনানিবাসসংলগ্ন এলাকা, বায়েজীদ, লালখান বাজারের মতিঝরনা, কুসুমবাগ এলাকায় পাহাড়ধসে ১৩২ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়া ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট নগরীর মতিঝরনা এলাকায় আবারও পাহাড়ধসে ১১ জন নিহত হয়। টানা বৃষ্টিতে যেকোনো সময় এসব এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ পাহাড়ের পাদদেশে কয়েক লাখ মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পাহাড় কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের সরাসরি কোনো আইন নেই। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মামলা করে আসছে অধিদপ্তর। এর ফলে আইনের ফাঁক দিয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।' পরিবেশকর্মী শরীফ চৌহান বলেন, 'সিডিএ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দুর্বলতার সুযোগে প্রভাবশালীরা চট্টগ্রামকে পাহাড়শূন্য করছে।'
ঝুলে আছে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন
চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। রয়েছে ভারী যন্ত্রপাতির সংকটও। বিশেষায়িত নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় এখনো নিয়োগ দেওয়া হয়নি বেসরকারি অপারেটর। এতে ঠিকাদার নিয়োগ দিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। এনসিটির পশ্চাৎ সুবিধাদির নির্মাণ কাজও সম্পন্ন হয়নি। বন্দরের ৭ থেকে ১০ নম্বর জেটি ভেঙে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ এবং আমদানি করা গাড়ি রাখার জন্য বন্দর অভ্যন্তরে বহুতল কার পার্ক নির্মাণ প্রকল্পসহ আরো অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা ঝুলে আছে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। বন্দরের ১ নম্বর জেটির উজানে সদরঘাট থেকে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু পর্যন্ত নদী তীরে প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণসহ ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। বিশাল এ প্রকল্পের কাজে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হলেও ঠিকাদার নিয়োগ ও বেসরকারি খাত থেকে ড্রেজারের সংস্থান এখনো হয়নি। বন্দরের একমাত্র ড্রেজার 'খনক' দুর্ঘটনায় প্রায় এক বছর ধরে অচল। এটি এখন চিটাগং ড্রাইডকে বড় ধরনের মেরামত ও ইঞ্জিন পুনঃস্থাপনের অপেক্ষায়।
ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হাবিবুর রহমান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, গত ১৭ মে আগ্রহী ঠিকাদারদের কাছ থেকে প্রস্তাব (আর্থিক ও কারিগরি) গ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছিল। এতে ৪০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প দরপত্র কিনেছে। সেগুলোর মূল্যায়ন কাজ চলছে। এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের আওতায় কনটেইনার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত দ্বি-স্তরবিশিষ্ট ফটক নির্মাণ, স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন ও বন্দর অভ্যন্তরে ৯০০ মিটার সড়কসহ ১ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণের কথা রয়েছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের মাত্র ৬০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হতে চলতি বছর পেরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী খায়রুল মোস্তফা।
চট্টগ্রাম চেম্বারসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি হচ্ছে, কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে বন্দরের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ তথা জেটি নির্মাণ করা হোক। কিন্তু এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরকে ভারত, ভুটান ও নেপালি পণ্যের ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সে ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষ কতটা প্রস্তুত ও সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারবে তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে সংশয় রয়েছে। ট্রানজিট পণ্য পরিবহনে উপযুক্ত যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টিও এখনো দৃশ্যমান নয়। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দরে ভারত ও পার্শ্ববর্তী দেশের পণ্যের ট্রানজিট সুবিধা দিতে তারা প্রস্তুত। কেননা বর্তমানে বন্দরে জাহাজ বার্থিং ও পণ্য হ্যান্ডলিং সুবিধার মাত্র ৬০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে।
গভীর সমুদ্রবন্দর আঁতুড়ঘরেই
বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া চ্যানেলে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন প্রকল্প এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জাপানি প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক কনসালট্যান্ট ইন্টারন্যাশনালের সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী তিন স্তরে বাস্তবায়নযোগ্য এই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালের মধ্যে এ বন্দরের প্রথম ধাপের জন্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব_পিপিপির আওতায় তা নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপিত হলে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল বিশেষ করে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য, কলকাতা বন্দর, নেপাল, মিয়ানমার ও চীনের কুনমিং প্রদেশে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হবে।
সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রথম ধাপে একটি পোতাশ্রয়ে ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৯টি জেটি নির্মাণ করা হবে। যেখানে ৯টি মাদার ভেসেল (বৃহদায়তনের জাহাজ), চারটি কনটেইনারবাহী ও পাঁচটি সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়ানো যাবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০৩৫ সালের মধ্যে আরো দুটি পোতাশ্রয়ের প্রতিটি সমসংখ্যক ও দৈর্ঘ্যের জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ২০৫৫ সালের মধ্যে আরো তিনটি পোতাশ্রয়ের প্রতিটিতে সমসংখ্যক ও সমদৈর্ঘ্যের জেটি নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে এ বৃহৎ প্রকল্পের কাজ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্ল্যানিং) হাদী হোসাইন বাবুল কালের কণ্ঠকে জানান, বর্তমানে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের জন্য পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
জানা যায়, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের সমীক্ষাকাজ সম্পাদনের জন্য এর আগে দুই ধাপে বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এটি জাতীয় পর্যায়ের একটি বৃহৎ প্রকল্প। তাই এ প্রকল্পের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। বন্দর কর্তৃপক্ষ এমন একটি প্রকল্পের ব্যয়ভার একা বহন করতে পারে না।
লোডশেডিং ও উৎপাদন সংকটে বিদ্যুৎ
চট্টগ্রামে এ মুহূর্তে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৬০০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৬০ থেকে ৩৭০ মেগাওয়াট অর্থাৎ গড় লোডশেডিং ২৮০ মেগাওয়াট। চট্টগ্রামে অবস্থিত সরকারি চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১০টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে চারটি। এ চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৮৮৬ মেগাওয়াট হলেও গত বৃহস্পতিবার পাওয়া গেছে ২৬৬ মেগাওয়াট।
এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১ নম্বর ইউনিটটি বন্ধ করে ওই গ্যাস দিয়ে ১৬ জুলাই থেকে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন পিকিং বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা হয়েছে। ফলে নতুন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলেও জাতীয় গ্রিডে নতুন করে কোনো বিদ্যুৎ যোগ হয়নি।
বিদ্যুতের অভাবে বন্দরনগরীতে স্থাপিত শিল্প-কারখানাগুলো প্রতি মাসে লোকসান গুনছে। বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি নাসিরুদ্দিন চৌধুরী ব্যাপক লোডশেডিংয়ের কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগে বছরে তিন-চার মাস বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হতো। কিন্তু এখন সারা বছর ধরে এ ভোগান্তি চলছে। এ কারণে চট্টগ্রামে গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে জেনারেটর জ্বালানি বাবদ প্রতি মাসে ডিজেলে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। অন্যান্য ক্ষতির কথা নাইবা বললাম।'
পানি সংকট : দুটি প্রকল্প হিমাগারে
১৯৬৩ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর চার প্রকল্পের মধ্যে মাত্র একটি বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৯৮৭ সালে হালদার পানি পরিশোধন করে মোহরা পানি পরিশোধন প্রকল্প এবং ৭২টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে নগরবাসীর চাহিদার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করছে ওয়াসা।
ইতিমধ্যে হিমাগারে গেছে মোহরা পানি শোধনাগার প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় ও মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প। ২০০৫ সালে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে জমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে মাত্র।
গত ২৩ বছরে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদন না বাড়ায় এখনো নগরীর অনেক এলাকায় পানি পাওয়া যায় না। চট্টগ্রামকে দ্বিতীয় রাজধানী বলা হলেও এখানকার আটটি ওয়ার্ডে আংশিক পানি সংযোগ লাইন থাকলেও ১৩টি ওয়ার্ডে পানির কোনো লাইন নেই। পানি না থাকা পতেঙ্গা, হালিশহর, বাকলিয়া, অক্সিজেন, বালুচরা ও ফতেয়াবাদ এলাকায় বসবাসকারীরা গভীর নলকূপের ওপর নির্ভরশীল। এসব এলাকার পানিতে লবণাক্ততা ও আয়রনের সমস্যা থাকায় জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, 'কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ২০১২ সালের মধ্যে শেষ না হওয়া পর্যন্ত নগরীর পানি সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। তবে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'
গ্যাস নাই, গ্যাস নাই
কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড জানায়, চট্টগ্রামে আবাসিক গ্রাহক, শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে এখন মোট ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২৩০ থেকে ২৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে ৪৮ থেকে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চলে যায় কর্ণফুলী সার কারখানায় (কাফকো)। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাউজান তাপবিদ্যুৎ এবং শিকলবাহা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দৈনিক ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যাচ্ছে। এই স্বল্প গ্যাস দিয়ে রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট (২১০ মেগাওয়াট) চলছে। তবে গ্যাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে সেখানকার আরেকটি ইউনিট।
কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেড কর্তৃপক্ষও এই সংকটজনক পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেনি, বরং গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করা না গেলে ভবিষ্যতে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট আরো ভয়াবহ রূপ নেবে বলে কর্মকর্তারা জানান।
কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গ্যাস সরবরাহের তুলনায় সমপ্রতি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংকট বেড়েছে। দিন দিন গ্যাসের গ্রাহক বাড়ছে। কিন্তু এর বিপরীতে সরবরাহ কমে যাচ্ছে। গত সোমবার সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৩০ মিলিয়ন ঘনফুট।'
এদিকে গত এক মাসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় সন্ধ্যার পর হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। নগরীর লালখান বাজার, কদমতলী, টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনি, হালিশহর, খুলশী, রৌফাবাদ, আগ্রাবাদের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, হাটহাজারীর চৌধুরীহাটে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।
স্থায়ী বাস টার্মিনাল নেই, দুঃসহ যানজট
নগরীর বহদ্দারহাট টার্মিনাল ছাড়া চট্টগ্রামে আর কোনো স্থায়ী বাস টার্মিনাল নেই। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি রুটের বাসের জন্য কোনো টার্মিনাল নেই। এ ছাড়া ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড ব্যবহারকারী দেশের উত্তরের জেলায় যাতায়াতকারী বাসগুলোর জন্য কোনো টার্মিনাল নেই। রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থেকেই এসব এলাকার বাসগুলো যাত্রী পরিবহন করে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, কক্সবাজার রুটের জন্য শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণপাড়ে, রাঙামাটি রুটের বাসগুলোর জন্য অক্সিজেন এবং ঢাকা ট্রাঙ্ক রুটের বাসগুলোর জন্য বাংলাবাজার এলাকায় পৃথক তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের ট্রাকগুলোর জন্য একটি ট্রাক টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে নগরীতে যানজট নিরসনের জন্য পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য একনেকে অনুমোদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট এবং জিইসি মোড়ের ফ্লাইওভারের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৩ জুলাই একনেকে অনুমোদন পাওয়া কদমতলী ফ্লাইওভারের কনসালট্যান্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা যায়।
সিডিএর চেয়ারম্যান বলেন, এসব ফ্লাইওভার এবং নগরীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের যানজট সমস্যা নিরসন হবে।
পর্যটন সম্ভাবনা চরম অবহেলায়
পাহাড়, সমুদ্রঘেরা অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার চট্টগ্রামে প্রত্যাশা অনুযায়ী আধুনিক পর্যটন ও বিনোদনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফয়'স লেক একমাত্র ব্যতিক্রম। বাণিজ্যিক এ নগরীতে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী ও পর্যটক এলেও তাঁদের নিরাপত্তাসহ পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা সীমিত। নেই কোনো পাঁচতারকা মানের হোটেল। নগরীর স্টেশন রোড এলাকায় পর্যটন মোটেলটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা চলছে। নগরীর পতেঙ্গায় অবস্থিত সমুদ্রসৈকত দোকানপাটে ঘিঞ্জি, আর আনোয়ারার ঝাউবন শোভিত পারকি সৈকতে পর্যটকদের যাতায়াত ও বিনোদনের ক্ষেত্রে উন্নত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অনেকের মতে, পাহাড়ঘেরা এ বন্দরনগরীকে পরিকল্পিত পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলা গেলে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।

Monday 19 July 2010

ট্রাইব্যুনালে দুই বিচারপতির কাজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুই বিচারপতির কাজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হাইকোর্টের কোনো বিচারপতির অন্য কোনো ট্রাইব্যুনালে কাজ করার সাংবিধানিক এখতিয়ার নেই। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চে গতকাল এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আগামী সোমবার পর্যন্ত রিটের শুনানি মুলতবি করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নওয়াব আলী ও সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী রিট আবেদনটি দায়ের করেছেন। রিট আবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাইকোর্টের বিচারক বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের কাজ করার এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান ও বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ দু’জনের কাজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় সিনিয়র আইনজীবী সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এমপি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি প্রমুখ রিট আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্খিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানিতে বলেন, হাইকোর্টের দু’জন কার্যরত বিচারপতিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ট্রাইব্যুনালে কাজ করে যাচ্ছেন। একই সাথে তারা হাইকোর্টেরও বিচারপতি। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর মানে হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের ওপর কোনো আদালত নেই। সুপ্রিম কোর্টের দু’টি বিভাগ। আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ। সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃত্ব করবে। অথচ হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারপতিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্য করা হয়েছে। তাদের কার্যক্রম এখতিয়ারবহির্ভূত। কারণ সংবিধান বর্ণিত অধস্তন আদালতে হাইকোর্টের দুই বিচারপতি কাজ করছেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদের প্রতিও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত বিচারকরূপে দায়িত্ব পালন করে থাকলে ওই পদ থেকে অবসর গ্রহণের কিংবা অপসারিত হওয়ার পর তিনি কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে ওকালতি বা কাজ করতে পারবেন না অথবা বিচার বিভাগীয় বা আধা বিচার বিভাগীয় পদ অথবা প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে বহাল হবেন না।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, অবসর গ্রহণের পরও বিচারপতিদের যেসব পদে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে হাইকোর্টের একজন কার্যরত বিচারপতির এসব পদে দায়িত্ব পালনের প্রশ্নই আসে না।
রুহুল কুদ্দুস বনাম বিচারপতি এম এ আজিজ মামলায় হাইকোর্টের দেয়া রায় আদালতের সামনে উথাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ওই রায়ে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, হাইকোর্টের কোনো বিচারপতিকে কোনো ট্রাইব্যুনাল বা লাভজনক পদে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এ ধরনের নিয়োগ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের দুই বিচারপতিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্টের নির্দেশে আইন সচিব এ নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ সংবিধানের ম্যান্ডেট হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ ও এ সংক্রান্ত সব এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের। অন্য কারো এ ধরনের এখতিয়ার নেই। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদ জাহাঙ্গীর এক সপ্তাহ সময় চান। আদালত আগামী সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এ প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে হাইকোর্টে কোনো রিট আবেদন দায়ের করা হলো।
এ দিকে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো: শাহিনুর ইসলাম তার কার্যালয়ে উপস্খিত সাংবাদিকদের সামনে সংবাদ বিবৃতি পাঠ করেন। এই বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতার বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের বিচারের জন্য গত ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে বিচারকবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট ১৯৭৩ ২২ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রুলস অব প্রসিজিউর প্রণয়নে সক্রিয় হন। ট্রাইব্যুনাল গঠনের ১০২ দিন পর এটি দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল রুলস অব প্রসিজিউর ২০১০ শিরোনামে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল বাংলা ভাষাতেও এই বিধিমালা প্রস্তুত করছেন। এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি গেজেট আকারে আগামী
সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
http://www.dailynayadiganta.com/fullnews.asp?News_ID=222849&sec=1