Tuesday 31 May 2011

পরীক্ষা ছাড়াই ৬৪ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ হচ্ছে









এম এ নোমান
কোনো ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়াই শুধুমাত্র দলীয় বিবেচনায় মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতর ও সরকারের অন্য সংস্থাগুলোতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা পদমর্যাদায় ৬৪ হাজার লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা এমনকি স্বাস্থ্য পরীক্ষারও প্রয়োজন হবে না। এডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা সংশোধন করে পিএসসির মাধ্যমে পরবর্তীতে নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি স্থায়ীকরণেরও সুপারিশ করে ইতোমধ্যে এর খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। আগামী ১ জুন অনুষ্ঠেয় সচিব কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন হতে পারে। এ বিধিমালা সংশোধন প্রস্তাব তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর, পরিদফতরসহ সরকারের অন্য সংস্থাগুলোতে দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণীর সহকারী পরিচালকের পদ পর্যন্ত বিভিন্ন পদে ৬৪ হাজার লোক নিয়োগের একটি চাহিদাপত্রও তৈরি করা হয়েছে। এসব পদে এডহকভিত্তিতে লোক নিয়োগের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্য মন্ত্রণালয়গুলো এর মধ্যেই প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সরকারি কর্মকমিশনকে (পিএসসি) পাশ কাটিয়ে এডহকভিত্তিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হলে দেশের বর্তমান প্রশাসন আরও মেধাহীন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন সাবেক সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এমনিতেই আমাদের দেশের প্রশাসন আন্তর্জাতিক মানের নয়। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। এখন আবার কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই ছাড়া শুধুমাত্র দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ দিলে এদের দিয়ে সরকারের দলীয় উদ্দেশ্য হয়তো সফল হবে, কিন্তু দেশের কোনো ক্ষতি ছাড়া কল্যাণ হবে না। তারা বলেন, বিএসএস পরীক্ষায় অংশ নেয়া হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বেকার পড়ে আছে। এরই মধ্যে ৬৪ হাজার পদ দলীয় লোকদের দিয়ে পূরণ করা হলে স্বাভাবিকভাবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তীব্র হতাশার সৃষ্টি করবে। ১৯৭৩ সালে পিএসপিকে বাদ দিয়ে দলীয় বিবেচনায় এডহকভিত্তিতে মেধাহীনদের নিয়োগের ফলে সৃষ্ট বোঝা প্রশাসনকে দীর্ঘদিন বহন করতে হয়েছে। এবারের বোঝা কতদিন টানতে হতে পারে সেটা কেউ বলতে পারবে না।
জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে যে, প্রশাসনকে গতিশীল, দক্ষ ও মেধাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে এডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা সংশোধন করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর ও পরিদফতরসহ অন্য সংস্থাগুলোতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের এডহকভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ২০০৯ সালের ১৫ জুলাই এক বৈঠকের মাধ্যমে এডহক ভিত্তিতে লোকবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়গুলোর অধীন
অন্যান্য বিভাগ ও সংস্থায় শূন্য পদের একটি তালিকা করা হয়। এতে দেখা যায় যে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী পদমর্যাদার ৬৪ হাজার পদ শূন্য রয়েছে। এ পদগুলোতে লোকবল নিয়োগের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। এ প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য আগামী ১ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. আবদুল আজিজের সভাপতিত্বে সচিব কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব : অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ই নয়, এর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ও একইভাবে চিকিত্সকদের নিয়োগ দিয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাব অনুমোদনের ক্ষেত্রে যুক্তি পেশ করে বলা হয়েছে, গত ২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এক পত্রের মাধ্যমে এডহকভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের চাকরি নিয়মিতকরণ এবং তাদেরকে ক্যাডারভুক্তির লক্ষ্যে এডহকভিত্তিক নিযুক্ত কর্মচারী নিয়মিতকরণ বিধিমালা ১৯৯৪ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে। ইতোমধ্যেই তারা এডহকভিত্তিতে ৩৫৫১ জন ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছে এবং আরও ৫৮২ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যদিও দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে ১৯৯৪ সালে বিধিমালার ৮নং ধারার আলোকে সরকারের রাজস্ব বাজেটের পদে এডহকভিত্তিক লোক নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে বাস্তবতার নিরিখে আবশ্যিক হওয়ায় ২০০৯ সালের ১৫ জুলাই বিধিমালার ৮নং ধারা বিলুপ্ত করা হয়। ফলে বর্তমানে রাজস্ব বাজেটের পদে এডহকভিত্তিতে নিয়োগে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। বিদ্যমান বিধিমালার আলোকে ১৯৯৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে নিয়োগপ্রাপ্তদেরই নিয়মিত করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে যেসব কর্মকর্তা এডহকভিত্তিক নিয়োগ পাবেন তাদের নিয়মিত করার সুযোগ নেই। কাজেই নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরি নিয়মিত করতে হলে বিদ্যমান বিধিমালাটিও সংশোধন করতে হবে। প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (কনসালটেশন) রেগুলেশন, ১৯৭৯ অনুযায়ী শুধুমাত্র পিএসসির আওতাভুক্ত ১ম ও ২য় শ্রেণীর পদে পিএসসি’র অনুমোদন সাপেক্ষে এডহকভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা যায়। শুধুমাত্র এসব পদে এডহক নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়মিতকরণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিষয়টি সংশোধিত বিধিমালায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পিএসসি’র অনুমোদন ছাড়া কোনো কর্তৃপক্ষ বিধিবহির্ভূতভাবে এডহক নিয়োগ দিলে সেটা বৈধ করতে হলেও বিধিমালার আওতাভুক্ত করতে হবে। সচিব কমিটিতে অনুমোদনের জন্য প্রস্তুতকৃত এ প্রস্তাবের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, এ সংশোধনী অনুমোদন হলে পিএসসির অনুমোদন ছাড়াই যে কোনো মন্ত্রণালয় কিংবা এর অধীন অন্যান্য বিভাগ ও অধিদফতর-পরিদফতরে এডহকভিত্তিতে ১ম ও ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া যাবে। নিয়োগ কর্তৃপক্ষ পিএসসির অনুমোদন নিয়ে তাদের চাকরি নিয়মিত করবেন। মূলত এর মাধ্যমে বর্তমানে শূন্য ও নতুনভাবে সৃষ্ট ৬৪ হাজার পদে ১ম ও ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের উত্কণ্ঠা : এডহকভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান আমার দেশকে বলেন, পিএসসি’র মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা নিযুক্ত হবেন এটাই হচ্ছে স্বীকৃত রীতি। স্বচ্ছতা ও মেধাবীদের মূল্যায়নের স্বার্থেই এ রীতি মানতে হয়। এডহক নিয়োগের পক্ষে সরকার যত যুক্তিই দেখাক না কেন, এ নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে জটিলতাও দেখা দিতে পারে।
এডহকভিত্তিতে ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ হলে দেশের গোটা প্রশাসনিক অবস্থা আরও ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রশাসন বিশ্লেষক এএসএম আবদুল হালিম আমার দেশকে বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের প্রশাসনিক অবস্থা সুস্থ নয়। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি আর দলীয় মনোভাবাপন্ন কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্যে চেইন অব কমান্ড নেই প্রশাসনের কোনো ক্ষেত্রেই। তার পরেও পিএসসির মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তারা নিযুক্ত হওয়ায় তাদের প্রতি মানুষের বিন্দুমাত্র হলেও আস্থা ও ভরসা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এডহকভিত্তিতে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়োগের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, সেটা হলে তো দেশে প্রশাসন বলতে কিছুই থাকবে না। এমনিতেই আমাদের প্রশাসন বর্তমানে মেধাহীন প্রশাসন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এর ওপর কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই দলীয় লোকদের নিয়োগ দিলে দেশের বড় ধরনের সর্বনাশ হবে। দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নির্যাতনের শিকার হবেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের এডহকভিত্তিতে নিয়োগের উদ্যোগ মনে হয় এটাই প্রথম। বর্তমানে পিএসসিকে পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে হাজার হাজার পদে দলীয় লোকদের নিয়োগের চেষ্টা সত্যিকারের মেধাবীদের বিক্ষুব্ধ ও হতাশ করে তুলবে। সরকারের মন্ত্রীরাও প্রায়ই বলেন, বর্তমান সরকারের সময় আওয়ামী লীগের দলীয় লোক ছাড়া অন্যদের চাকরি দেয়া হবে না। এটা দেশের জন্য অকল্যাণ ছাড়া কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। ইতোমধ্যেই মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত প্রায় সাড়ে ৫শ’ কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এখন আবার এডহকভিত্তিক কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলে সেটা হবে প্রশাসনকে দলীয়করণের ক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রক্রিয়া।
সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান আমার দেশকে বলেন, প্রশাসনকে দলীয়করণের মাধ্যমে সব সরকারই রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে থাকে। কোনো সরকার একটু বেশি করে আবার কোনো সরকার একটু কম করে। জোট সরকারের চেয়ে মহাজোট সরকারের আকার বড় তাই তারা একটু বেশিই করছে। তবে পিএসসিকে পাশ কাটিয়ে ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের এ উদ্যোগ নজিরবিহীন। এটা প্রশাসনকে মেধাহীন করে ফেলবে। পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ হলে অন্ততপক্ষে মেধাবীরা প্রশাসনে আসার সুযোগ পায়। আর এডহকভিত্তিতে নিয়োগ হলে মেধাহীন দলবাজরাই নিযুক্ত হবে। এটা নিয়ে রাখঢাকের কিছু নেই। কোনো কোনো মন্ত্রী বলেছেন, তারা দলীয়ভিত্তিতেই লোকবল নিয়োগ দেবেন। তারা মেধাবীদের কথা বলেননি। বদিউর রহমান বলেন, ১৯৭৩ সালে একবার পিএসসিকে পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে মেধাহীনদের দলীয় বিবেচনায় প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। সেই বোঝা দেশ বহু বছর টেনেছে। একইভাবে এবারও এডহকভিত্তিতে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এটা কোনো অবস্থায়ই সমর্থনযোগ্য নয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আমার দেশকে বলেন, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য স্বীকৃত পন্থা রয়েছে। পিএসপির মাধ্যমে নিয়োগ হলে দক্ষ, যোগ্য ও কর্মঠরাই নিয়োগ পান। কিন্তু পিএসসিকে পাশ কাটিয়ে কোনো ধরনের পরীক্ষা ও যোগ্যতার যাচাই ছাড়াই দলীয়ভাবে লোক নিয়োগ করা হলে প্রশাসন আরও মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। প্রশাসনে দলীয়করণের নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি হবে। এটার বিরুদ্ধে বিবেকবান সকলেরই সোচ্চার হওয়া উচিত।

ইউপি নির্বাচন : কমিশনে অভিযোগের স্তূপ : ক্ষমতাসীনদের দাপটে অসহায় ভিন্নমতাবলম্বী প্রার্থীরা

কাজী জেবেল

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে অভিযোগের স্তূপ ততই বাড়ছে। বেশিরভাগ অভিযোগে ক্ষমতাসীনদের দাপটে বিরোধীদলীয় সমর্থক এবং স্থানীয় এমপির সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হতে আগ্রহীরা নির্বাচনী কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না বলে জানানো হয়েছে। চিঠিতে নির্বাচনী এলাকায় ক্ষমতাসীনদের অপতত্পরতা, সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব, প্রার্থী হতে বাধা দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ এমপিদের বাধায় প্রার্থী হতে পারছেন না জানিয়ে কমিশনের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন। ক্ষমতাসীনদের বাধায় অনেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন না—এমন আশঙ্কা জানিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে দাখিল করার সুযোগ দিতে কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি উঠেছে। এ অবস্থায় আজ কমিশন সচিবালয়ে নির্বাচনী জেলার ডিসি ও এসপিদের সঙ্গে বৈঠকে করা হবে। বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। খবর নির্বাচন কমিশন সূত্রের।
কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন ডাক ও ফ্যাক্সযোগে অসংখ্য অভিযোগ আসছে। সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী ও তাদের অনুসারিরা সরাসরি কমিশনে এসে অভিযোগ জানিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে ফোন করেও অভিযোগ করছেন। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশের বাইরে থাকায় আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। আমার হাতে অভিযোগ আসার পর মন্তব্য করব।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে কমিশনে অভিযোগের সংখ্যা ততই বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসছে চট্টগ্রাম অঞ্চল, যশোর, কুষ্টিয়া, মুন্সীগঞ্জ, নওগাঁ, গাইবান্ধা জেলা থেকে। এক অভিযোগে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম-৫ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী প্রতিটি ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাই করে দিচ্ছেন। এসব প্রার্থীর বাইরে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দল থেকে কাউকে প্রার্থী হতে বাধা দিচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি রাউজান উপজেলার ছয়জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইনের সঙ্গে দেখা করে একই অভিযোগ করেছেন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, মিরপুর, খোকসা, যশোরের শার্শা, অভয়নগর, মনিরামপুর, ঝিনাইদহ, শৈলকূপা থেকে আসা অভিযোগগুলোতে বলা হয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে সরকারদলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে চরমপন্থী সংগঠনের সদস্যরা সংগঠিত হচ্ছে। তারা আতঙ্ক ছড়াতে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। দেশের অন্য স্থান থেকে আসা কয়েকটি অভিযোগে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যরা মিটিং করে দলীয় প্রার্থী ঠিক করে দিচ্ছেন। বিদ্রোহী বা বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা যাতে নির্বাচন না করেন সেজন্য শাসিয়ে দেন তারা। এসব অভিযোগে প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন না আশঙ্কা করে বিকল্প পদ্ধতিতে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ দিতে কমিশনের কাছে আবেদন জানান। এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে এলাকায় সন্ত্রাসীদের তত্পরতা নিয়ে অভিযোগ আসছে। রাউজানের ২নং ডাবুয়া ইউপি থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেয়া এক চিঠিতে বলা হয়, চিহ্নিত সন্ত্রাসী নাজিমউদ্দিন ওরফে ওরলী নাজিম, জাহাঙ্গীর ওরফে লাল জাহাঙ্গীর, কালা জাহাঙ্গীর, মো. আলী ওরফে আইল্যা, আবদুর রশীদ ওরফে রইশ্যা এলাকায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছে। তারা অন্য প্রার্থী ও সমর্থকদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। ৯নং পাহাড়তলী ইউপি থেকে সিইসি বরাবরে দেয়া অপর একটি আবেদনে বলা হয়, দেশে বা বিদেশে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় জড়ো হয়েছে।
এসব চিঠিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় প্রচুর সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন, অস্ত্র উদ্ধার ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।