Tuesday 31 May 2011

ইউপি নির্বাচন : কমিশনে অভিযোগের স্তূপ : ক্ষমতাসীনদের দাপটে অসহায় ভিন্নমতাবলম্বী প্রার্থীরা

কাজী জেবেল

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে অভিযোগের স্তূপ ততই বাড়ছে। বেশিরভাগ অভিযোগে ক্ষমতাসীনদের দাপটে বিরোধীদলীয় সমর্থক এবং স্থানীয় এমপির সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হতে আগ্রহীরা নির্বাচনী কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না বলে জানানো হয়েছে। চিঠিতে নির্বাচনী এলাকায় ক্ষমতাসীনদের অপতত্পরতা, সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব, প্রার্থী হতে বাধা দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ এমপিদের বাধায় প্রার্থী হতে পারছেন না জানিয়ে কমিশনের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন। ক্ষমতাসীনদের বাধায় অনেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন না—এমন আশঙ্কা জানিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে দাখিল করার সুযোগ দিতে কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি উঠেছে। এ অবস্থায় আজ কমিশন সচিবালয়ে নির্বাচনী জেলার ডিসি ও এসপিদের সঙ্গে বৈঠকে করা হবে। বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। খবর নির্বাচন কমিশন সূত্রের।
কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন ডাক ও ফ্যাক্সযোগে অসংখ্য অভিযোগ আসছে। সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী ও তাদের অনুসারিরা সরাসরি কমিশনে এসে অভিযোগ জানিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে ফোন করেও অভিযোগ করছেন। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশের বাইরে থাকায় আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি। আমার হাতে অভিযোগ আসার পর মন্তব্য করব।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে কমিশনে অভিযোগের সংখ্যা ততই বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসছে চট্টগ্রাম অঞ্চল, যশোর, কুষ্টিয়া, মুন্সীগঞ্জ, নওগাঁ, গাইবান্ধা জেলা থেকে। এক অভিযোগে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম-৫ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী প্রতিটি ইউনিয়নে প্রার্থী বাছাই করে দিচ্ছেন। এসব প্রার্থীর বাইরে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দল থেকে কাউকে প্রার্থী হতে বাধা দিচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি রাউজান উপজেলার ছয়জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইনের সঙ্গে দেখা করে একই অভিযোগ করেছেন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, মিরপুর, খোকসা, যশোরের শার্শা, অভয়নগর, মনিরামপুর, ঝিনাইদহ, শৈলকূপা থেকে আসা অভিযোগগুলোতে বলা হয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে সরকারদলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে চরমপন্থী সংগঠনের সদস্যরা সংগঠিত হচ্ছে। তারা আতঙ্ক ছড়াতে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। দেশের অন্য স্থান থেকে আসা কয়েকটি অভিযোগে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যরা মিটিং করে দলীয় প্রার্থী ঠিক করে দিচ্ছেন। বিদ্রোহী বা বিরোধীদলীয় প্রার্থীরা যাতে নির্বাচন না করেন সেজন্য শাসিয়ে দেন তারা। এসব অভিযোগে প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন না আশঙ্কা করে বিকল্প পদ্ধতিতে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সুযোগ দিতে কমিশনের কাছে আবেদন জানান। এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে এলাকায় সন্ত্রাসীদের তত্পরতা নিয়ে অভিযোগ আসছে। রাউজানের ২নং ডাবুয়া ইউপি থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেয়া এক চিঠিতে বলা হয়, চিহ্নিত সন্ত্রাসী নাজিমউদ্দিন ওরফে ওরলী নাজিম, জাহাঙ্গীর ওরফে লাল জাহাঙ্গীর, কালা জাহাঙ্গীর, মো. আলী ওরফে আইল্যা, আবদুর রশীদ ওরফে রইশ্যা এলাকায় এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নেমেছে। তারা অন্য প্রার্থী ও সমর্থকদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। ৯নং পাহাড়তলী ইউপি থেকে সিইসি বরাবরে দেয়া অপর একটি আবেদনে বলা হয়, দেশে বা বিদেশে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় জড়ো হয়েছে।
এসব চিঠিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় প্রচুর সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন, অস্ত্র উদ্ধার ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment