Saturday 16 July 2011

অস্থির মসলার বাজার : এক মাসে পেঁয়াজের দর বেড়েছে ৪১ ভাগ আদার কেজি ৯০, হলুদ ২৮০ টাকা

















অর্থনৈতিক রিপোর্টার
রমজান মাস আসছে—এ সুযোগকে অন্যায়ভাবে কাজে লাগিয়ে গত সাতদিনে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে কেজিপ্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত। আর এক মাসের হিসাবে মূল্যবৃদ্ধির হার ৪১ ভাগ। একই অবস্থা আদা, রসুন, হলুদ ও মরিচের। রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায়। এক মাস আগেও পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ২৬ থেকে ৩০ টাকা। বিক্রেতাদের দাবি, রোজার কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে, ফলে বাড়ছে দাম।সরকারি বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেয়া গতকালের বাজার দর তথ্যে জানা গেছে, গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম ৪০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশ বলে জানিয়েছে টিসিবি। সংস্থার বাজার দর পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২৮ থেকে ৩০ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা কেজিতে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৪ টাকা। তবে কারওয়ানবাজারের মূল্যের সঙ্গে হাতিরপুল বাজারের মূল্যে কেজিপ্রতি ২/৩ টাকা তফাত্ রয়েছে। কারওয়ানবাজার থেকে হাতিরপুল বাজারের দূরত্ব বেশি নয়, তারপরও কেন বাড়তি ২/৩ টাকা বেশি মূল্য? এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিরপুল বাজারের বিক্রেতা আবুল কাশেম জানান, কারওয়ানবাজারে পাইকারি মূল্যেই সাধারণত পণ্য বিক্রি হয়। এ কারণে দাম কিছুটা কম। তবে হাতিরপুল বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা কেজি দরে।এদিকে অস্থির আদা-রসুনের বাজার। টিসিবির বাজার দর তথ্যে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি দেশি রসুনের দাম ৭৫ থেকে ৯০ টাকা। তবে গতকাল হাতিরপুল বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, এক কেজি দেশি রসুনের দাম ৯৬ থেকে ১০২ টাকা। টিসিবির দাবি অনুযায়ী, রসুনের দাম কয়েকদিন ধরেই স্থিতিশীল। বাস্তবে দেখা গেছে, গত সাত দিনে প্রতি কেজি রসুনের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। এ বিষয়ে টিসিবির প্রধান কর্মকর্তা (সিএমএস ও এসএন্ডডি) রফিকুল ইসলাম জানান, আমদানি করা রসুনের দাম গত ৩ জুলাই সামান্য হ্রাস পায়।ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি ব্যয় বাড়ায় রসুনের দাম বেড়েছে। দেশি রসুনের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে অনেক ব্যবসায়ী বলেন, একশ্রেণীর মজুতদার, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীর কারসাজিতেই ধাপে ধাপে রসুনের দাম বেড়েছে। টিসিবি জানিয়েছে, রাজধানীর বাজারে গত এক মাসে আদার দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশনের অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর তথ্যমতে, এক মাসে আদার দাম গড়ে প্রায় ১৮ ভাগ বেড়েছে। গতকাল কারওয়ানবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। তবে দেশি আদার দাম প্রতি কেজি ৯৫ টাকা। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার দিন বাজারে প্রতি কেজি আদার দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা ছিল বলে জানিয়েছে টিসিবি। সেই হিসাবে আদার দাম বর্তমানে দ্বিগুণ।এক কেজি হলুদের দাম এখন ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। টিসিবি অবশ্য জানিয়েছে, ২৬০ টাকা দরেও বাজারে হলুদ বিক্রি হচ্ছে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি টিসিবির বাজার দর তথ্যে হলুদের দাম উল্লেখ করা হয় ৯৫ থেকে ১১০ টাকা। বর্তমান সরকারের গত আড়াই বছরে হলুদের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ১৭৫ টাকা।
শুধু পেঁয়াজ, রসুন, আদাই নয়, বর্তমান সরকারের গত আড়াই বছরে শুকনা মরিচ, জিরা, ধনিয়া, এলাচ, দারুচিনিসহ সব ধরনের মসলার দাম বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।