Monday 19 July 2010

ট্রাইব্যুনালে দুই বিচারপতির কাজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুই বিচারপতির কাজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হাইকোর্টের কোনো বিচারপতির অন্য কোনো ট্রাইব্যুনালে কাজ করার সাংবিধানিক এখতিয়ার নেই। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টে ডিভিশন বেঞ্চে গতকাল এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আগামী সোমবার পর্যন্ত রিটের শুনানি মুলতবি করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নওয়াব আলী ও সাবেক সচিব এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী রিট আবেদনটি দায়ের করেছেন। রিট আবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাইকোর্টের বিচারক বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের কাজ করার এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ গঠিত ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান ও বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ দু’জনের কাজের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় সিনিয়র আইনজীবী সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমপি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এমপি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি প্রমুখ রিট আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্খিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক শুনানিতে বলেন, হাইকোর্টের দু’জন কার্যরত বিচারপতিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা ট্রাইব্যুনালে কাজ করে যাচ্ছেন। একই সাথে তারা হাইকোর্টেরও বিচারপতি। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর মানে হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের ওপর কোনো আদালত নেই। সুপ্রিম কোর্টের দু’টি বিভাগ। আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ। সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃত্ব করবে। অথচ হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারপতিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্য করা হয়েছে। তাদের কার্যক্রম এখতিয়ারবহির্ভূত। কারণ সংবিধান বর্ণিত অধস্তন আদালতে হাইকোর্টের দুই বিচারপতি কাজ করছেন। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদের প্রতিও আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত বিচারকরূপে দায়িত্ব পালন করে থাকলে ওই পদ থেকে অবসর গ্রহণের কিংবা অপসারিত হওয়ার পর তিনি কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে ওকালতি বা কাজ করতে পারবেন না অথবা বিচার বিভাগীয় বা আধা বিচার বিভাগীয় পদ অথবা প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টার পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে বহাল হবেন না।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, অবসর গ্রহণের পরও বিচারপতিদের যেসব পদে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে হাইকোর্টের একজন কার্যরত বিচারপতির এসব পদে দায়িত্ব পালনের প্রশ্নই আসে না।
রুহুল কুদ্দুস বনাম বিচারপতি এম এ আজিজ মামলায় হাইকোর্টের দেয়া রায় আদালতের সামনে উথাপন করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ওই রায়ে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, হাইকোর্টের কোনো বিচারপতিকে কোনো ট্রাইব্যুনাল বা লাভজনক পদে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এ ধরনের নিয়োগ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি আরো বলেন, হাইকোর্টের দুই বিচারপতিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্টের নির্দেশে আইন সচিব এ নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ সংবিধানের ম্যান্ডেট হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ ও এ সংক্রান্ত সব এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের। অন্য কারো এ ধরনের এখতিয়ার নেই। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদ জাহাঙ্গীর এক সপ্তাহ সময় চান। আদালত আগামী সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এ প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে হাইকোর্টে কোনো রিট আবেদন দায়ের করা হলো।
এ দিকে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার মো: শাহিনুর ইসলাম তার কার্যালয়ে উপস্খিত সাংবাদিকদের সামনে সংবাদ বিবৃতি পাঠ করেন। এই বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতার বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের বিচারের জন্য গত ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে বিচারকবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনাল দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট ১৯৭৩ ২২ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রুলস অব প্রসিজিউর প্রণয়নে সক্রিয় হন। ট্রাইব্যুনাল গঠনের ১০২ দিন পর এটি দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল রুলস অব প্রসিজিউর ২০১০ শিরোনামে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল বাংলা ভাষাতেও এই বিধিমালা প্রস্তুত করছেন। এর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি গেজেট আকারে আগামী
সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
http://www.dailynayadiganta.com/fullnews.asp?News_ID=222849&sec=1

No comments:

Post a Comment