Wednesday 29 December 2010

মোটা চালের কেজি ৩৮ টাকা ফাঁপরে নিম্ন আয়ের মানুষ

সৈয়দ মিজানুর রহমান

বাজারে এখন এক কেজি মোটা চালের দাম ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা। ৩৬ টাকা দরে যে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে তার মান খুব একটা ভালো না। তবে মান ভালো না হলেও কিছুই করার নেই গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষের।
চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা বাজারে এখন ৩৮ টাকা কেজি দরে মোটা চাল (স্বর্ণা বা চায়না ইরি) বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এ মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা দরে। গত সাত দিনে প্রতি কেজি মোটা চালের দর বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন গতকাল আমার দেশকে জানান, পাইকারি চালের আড়তে গত কয়েক দিন ধরেই দর ঊর্ধ্বমুখী। আড়তে সাত দিনের মাথায় প্রতি বস্তা মোটা চালের দর বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। তিনি দাবি করেন, মিলাররা চালের মজুদ গড়ে তুলছে। ফলে আড়তে মোটা চালের আমদানি কম। এ কারণে দাম বাড়ছে।
বাদামতলীর চাল ব্যবসায়ী আকবর হোসেন জানান, শুধু মোটা চালই নয়, গত কয়েকদিন ধরে সব ধরনের চালের দরই বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘সরকারের হাতে চালের খুব একটা মজুদ নেই’—এমন খবর ছড়িয়ে রাইসমিলগুলো বাড়তি ফায়দা লুটছে। মিল থেকে চাল সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে গত কয়েক দিনে মোটা চালের দরই বেশি বেড়েছে বলে জানান পাইকারি চাল বিক্রেতা আকবর হোসেন।
সরকারি বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) বাজার দর অনুসন্ধান ও গবেষণা সেল সূত্র জানিয়েছে, গত সাত দিনের মাথায় মোটা চালের দর কয়েক দফায় বেড়েছে। টিসিবি জানিয়েছে, গত এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দর বেড়েছে ৪০ শতাংশ।
টিসিবি’র দাবি, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা দরে। গত এক মাসে মোটা চালের দর বেড়েছে ৮ শতাংশ। টিসিবি’র তথ্য তুলে ধরে মোটা চালের দর জানতে চাইলে পলাশী মোড় কাঁচা বাজারের চাল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন আমার দেশকে বলেন, ৩৮ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই। টিসিবি মোটা চালের দর ৩৪-৩৬ টাকা বললেও বাস্তবে এ দরে রাজধানীর কোনো বাজারেই মোটা চাল মিলছে না বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী। তবে অতি নিম্নমানের মোটা চাল ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা দরে পাওয়া যায় বলে জানান তিনি। এ মানের চালের ক্রেতা খুবই কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি সাধারণ মানের নাজির ও মিনিকেট চাল বিক্রি হয় ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা কেজি। ভালো মানের নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হয় ৪৮ থেকে ৫২ টাকা কেজি। তবে টিসিবি জানিয়েছে, মিনিকেট ও নাজির চাল বিক্রি হয় ৪৪ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
পাইজাম ও লতা মানের চাল গতকাল বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে। তবে টিসিবি বলছে, এ মানের চাল গতকাল ৩৯ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
টিসিবি’র হিসাবে ২০০৬ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাজারে এক কেজি সরু চাল বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৬ টাকা দরে। সে সময় মোটা চালের দর ছিল ১৭ থেকে ১৯ টাকা কেজি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার চাল কলগুলোতে যে দরে চাল বিক্রি হচ্ছে, রাজধানীর বাজারে এখন সে চাল প্রতি কেজিতেই ৯ থেকে ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর কারণ জানতে চাইলে বাবুবাজারের চালের আড়তদার আনসার হোসেন বলেন, ‘চালের বাজারে এখন শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই। ভারতে দর বাড়ার খবর বেরুলেও এখানে দাম বেড়ে যায়। আবার সরকারের কাছে মজুদ নেই, এমন তথ্যও মিলাররা জানেন। বাজারে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা।’
দেশীয় মিনিকেট চালের প্রধান উত্সস্থল কুষ্টিয়া। গতকাল কুষ্টিয়ার একটি রাইস মিল মালিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তারা কেন চাল মজুদ করছেন? জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ চাল ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি হচ্ছে। নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠন চাঁদা তুলছে। বেড়ে গেছে ট্রাক ভাড়া। ট্রাক নিয়ে আড়তে ঢুকতে গেলেও চাঁদা গুনতে হচ্ছে।’ এসব কারণে দাম বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, শেরপুর, রাজশাহী ও নাটোরসহ বিভিন্ন জেলার রাইস মিলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ধান বা চালের কোনো ঘাটতি নেই। তার পরও কেন চালের বাজার চড়া—জানতে চাইলে বাবুবাজারের আরেক চাল বিক্রেতা ফয়সাল মোল্লা জানান, চালের দর বাড়লে কৃষকের কোনোই লাভ নেই। এখন বাজারে যেসব চাল আসছে, সেগুলো মিলাররা মজুদ রেখেছিলেন। তাদের হাতে ধানের অভাব নেই। এছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীরাও বাড়তি ফায়দা লুটছে।

No comments:

Post a Comment