Monday 19 December 2011

ঘুষ দাবি করায় বিদেশি বিনিয়োগ হলো না




কাদের গনি চৌধুরী
ঘুষ আর দুর্নীতির রাহুগ্রাসে বিনিয়োগকারীরা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন আবার অনেকে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন বিনিয়োগ না করে। অভিযোগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানালেন তারা। বিনিয়োগকারীরা জানান, সরকারি দলের প্রভাবশালীদের শেয়ার ও ঘুষ না দিলে তাদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি ব্যবসা গুটিয়েও চলে যেতে হচ্ছে।
রূপসী বাংলা এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল হোসেন প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে কানাডা থেকে এসেছিলেন বাংলাদেশে বিমান খাতে বিনিয়োগ করতে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক আফজাল এর আগে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্ বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা বোম্বারডিয়ার এরোস্পেসে বিমান প্রকৌশলী ছিলেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসে বার বার বাধাগ্রস্ত হন তিনি। প্রতিটি পদে ঘুষ দাবি করা হয় তার কাছে। নানা বাধা পেরিয়ে ২৯ মে ফিলিপাইন থেকে দুটি বিমান যখন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তখনই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের দোহাই দিয়ে বিনিয়োগ ছাড়াই ২০ ভাগ শেয়ার, এমডি পদ এবং ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। এতে রাজি না হলে নানা হয়রানির পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনায় চরমভাবে বাধা দেয়া হয়। প্রভাবশালী এ মহলটির চাপে সিভিল অ্যাভিয়েশনও তাকে সহযোগিতা করতে অপারগতা প্রকাশ করে। এমনকি সব নিয়মনীতি মেনে বিদেশ থেকে আনা প্লেন দুটি তাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য করে।
হয়রানির বর্ণনা দিয়ে কানাডিয়ান নাগরিক আফজাল হোসেন আমার দেশ-কে বলেন, কেনা বিমান দুটির টেকনিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশনে আবেদন করলে ডেপুটি ডিরেক্টর এয়ার ক্রাফট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লাইসেন্স মো. গোলাম সারোয়ার মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন। এতে আমি সম্মত না হলে নানাভাবে হয়রানি এবং ৫৩ দিন পর টেকনিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দেয়া হয়। একই সঙ্গে আমদানি অনাপত্তিপত্র দেয়ার কথা থাকলেও সেটি আটকে রাখেন। আমি আমদানি অনাপত্তিপত্র চাইলে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। এতেও আমি সম্মত হইনি। এ ব্যাপারে আমি বার বার চাপ সৃষ্টি করলে অসম্পূর্ণ ও সুস্পষ্ট মতামত ছাড়াই একটি আমদানি অনাপত্তিপত্র বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় সুস্পষ্ট মতামত চেয়ে ফাইল ফেরত পাঠায় সিভিল অ্যাভিয়েশনে। অবশ্য পরে এটি দেয়া হয়। এরপর ফিলিপাইন থেকে কেনা বিমান দুটি পরিদর্শনের জন্য আবেদন করা হলে মো. গোলাম সারোয়ার আবারও ঘুষ দাবি করেন। এবারও আমি সম্মত হইনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি একসঙ্গে তিনজনকে পরিদর্শনে পাঠান এবং আমি কীভাবে বাংলাদেশে ব্যবসা করি দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন। বড় বড় বিমান পরিদর্শনে যেখানে একজনকে পাঠানো হয়, সেখানে ছোট বিমান পরিদর্শনে কেন তিনজনকে পাঠানো হলো—জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমানের ব্যবসা করবেন টাকা খরচ করবেন না, এটা তো হয় না। তিন পরিদর্শক ২০ মে ফিলিপাইনে যান এবং ২৩ মে ফিরে আসেন। পরিদর্শকরা সিভিল অ্যাভিয়েশন এয়ার নেভিগেশন আদেশ অনুযায়ী পরিদর্শনস্থলেই সার্টিফিকেট দেয়ার কথা থাকলেও তা করেননি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিদর্শকরা জানান, উপরের নির্দেশ আছে যেন এখানে কোনো সার্টিফিকেট না দেই। বাংলাদেশে এসে সার্টিফিকেটের জন্য গোলাম সারোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আবারও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। শুধু তা-ই নয়, পরিদর্শকরা পরিদর্শনকালে তাদের প্রাপ্য টিএ-ডিএ’র চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আদায় করেন। এ ব্যাপারে আমি দুদকে একটি মামলা করেছি। পরে আমি গোপালগঞ্জের সাবেক এক বিমান কর্মকর্তার শরণাপন্ন হই। তিনি আমাকে নিয়ে যান প্রধানমন্ত্রীর এসএসএফ পরিচয়দানকারী বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার মামুনের কাছে। তিনি আমার কাছে বিনা অর্থায়নে কোম্পানির ২০ ভাগ শেয়ার, এমডি পদ ও ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এতে আমি রাজি না হলে সিভিল অ্যাভিয়েশনে অত্যন্ত প্রভাবশালী এ দুই ব্যক্তি আমাকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন। এমনকি প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দেন। একপর্যায়ে আমি উপায় না দেখে বিমানবন্দর থানায় জিডি করি। এরপর তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং সিভিল অ্যাভিয়েশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে আমাকে নানাভাবে নাজেহাল করার চেষ্টা করেন।
বিদেশি এই বিনিয়োগকারী জানান, তিনি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট দুটি পরিচালনায় অনুমতির জন্য সদ্যবিদায়ী বিমানমন্ত্রী জিএম কাদের ও সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যানের কাছে বার বার ধরনা দিয়েও কোনো সহযোগিতা পাননি। ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এসে তার সারাজীবনের উপার্জন হারাতে বসেছেন তিনি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও তিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ও বিমানমন্ত্রীকে লেখা চিঠি : রূপসী বাংলা এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল হোসেন প্রধানমন্ত্রী ও বিমানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বলেন, আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক এবং বর্তমানে কানাডার নাগরিক। গত ২৮ মে ২০০৭ তারিখে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অফিস, বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কানাডীয় বাংলাদেশ হাইকমিশনের কনস্যুলার (বাণিজ্য) আমাকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানান। আমাদের মধ্যে একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। যেখানে সব ক্ষেত্রে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের অঙ্গীকার প্রদান করা হয়েছে। এতে আমি বেশ আশ্বস্ত হই। এর পর আমি আমার গুরুত্বপূর্ণ চাকরি বিশ্বের স্বনামধন্য বিমান নির্মাণকারী সংস্থা বোম্বারডিয়ার এরোস্পেসে বিমান প্রকৌশলীর পদ থেকে পদত্যাগ করি এবং বাংলাদেশে একটি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠা করি। এয়ারলাইন্সটি ২৩ জুলাই ২০০৮ ইং তারিখে রূপসী বাংলা এয়ারলাইন্স নামে বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে—বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় এবং জেলা থেকে জেলায় ও বিদেশে বিমান পরিচালনার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা ও বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা। উল্লেখ্য, বর্তমানে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশি এয়ালাইন্সগুলো বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে।
চিঠিতে আফজাল বলেন, আপনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমি গত ৬ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে ফিলিপাইনের অ্যাভিয়েশন এন্টারপ্রাইজ ও সাউথ ইস্ট এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে দুটি বিমান কেনার জন্য খসড়া চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করি। ওই বিমান দুটি কেনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশনের বিমানের বয়স সংক্রান্ত এএনও (এ ডব্লিউ) এ/২১, ইস্যু-১ আদেশের ৫.৫ ধারার ৫.৫.২ উপধারা অ্যাজ লিমিট অব এয়ারক্রাফটের নিয়ম অনুসরণ করে কেনা হয়।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ওই কেনা বিমান দুটির টেকনিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের জন্য, এএনও (এ ডব্লিউ) এ/২,ইস্যু-৪ এর ৩ ধারার ৩.৩ উপধারা পূরণসাপেক্ষে সিভিল অ্যাভিয়েশনের ফর্ম সিএ-১৮২সি এবং বিমান দুটির পূর্ণাঙ্গ বিবরণীসহ দুটি আবেদনপত্র, যার স্মারক নং আরবিএ/১৩০৭/ইএনজিজি/বি৭৩৭-৩০০/উ-৪০ এবং ৪১-এর মাধ্যমে আবেদন করি। ওই আবেদনের ৫৩ (তেপান্ন) দিন পর ২৮ মার্চ ২০১১ তারিখ সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে বিমান দুটির টেকনিক্যাল ক্লিয়ারেন্স দেয়। ওই টেকনিক্যাল ক্লিয়ারেন্সে মোট ৪টি কাজ সম্পন্ন করার জন্য ৬০ (ষাট) দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়—যা স্বাভাবিকভাবেই ২৮ মে ২০১১ তারিখে শেষ হওয়ার কথা। উল্লেখ্য, এএনও (এডব্লিউ) এ২, ইস্যু ৪-এর ৩ ধারার ৩.৪ উপধারা মোতাবেক অপারেটর/আবেদনকারী যদি কেনা বিমান শুধু টেকনিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে আনতে চায়, বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে অস্থায়ী সার্টিফিকেট অব রেজিস্ট্রেশন (সি অব আর) ও সার্টিফিকেট অব এয়ার ওরদিনেস (সি অব এ) লাগবে। এটি ছাড়া আনতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই রফতানিকারী দেশের সার্টিফিকেট অব রেজিস্ট্রেশন (সি অব আর) ও সার্টিফিকেট অব এয়ার ওরদিনেস (সি অব এ)-এর মাধ্যমে বিমান ডেলিভারির (ফেরি ফ্লাইট) ব্যবস্থা করতে হয়। অর্থাত্ কেনা বিমান বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আনার জন্য টেকনিক্যাল সার্টিফিকেটই যথেষ্ট; অন্য বাকি ৪টি শর্ত পূরণের প্রয়োজন নেই। নিয়ম অনুযায়ী ওই টেকনিক্যাল ক্লিয়ারেন্সের সঙ্গে একটি আমদানি অনাপত্তিপত্র (এনওসি ফর ইমপোর্ট) সংযুক্ত করে তা বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর কথা। কিন্তু সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ মো. গোলাম সারোয়ার ওই পত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য পাঁচ লাখ টাকা উেকাচ দাবি করেন। আমি উেকাচ দিতে অস্বীকার করলে তিনি আমদানি অনাপত্তিপত্র (এনওসি ফর ইমপোর্ট) প্রেরণে গড়িমসি করেন। আমি তার এই অসত্ উদ্দেশ্যের কথা বুঝতে পেরে ২৯ মার্চ ২০১১ এবং ৫ এপ্রিল ২০১১ তারিখে পর পর দুটি আবেদনপত্র—যার স্মারক নং আরবিএ/১০০২/ইএনজিজি/ভিওএল-০১/ই-৪১ এবং আরবিএ/১০০২/ইএনজিজি/ভিওএল-০১/ই-৪৩-এর মাধ্যমে আমদানি অনাপত্তিপত্রের (এনওসি ফর ইমপোর্ট) জন্য আবেদন করি, যা প্রয়োজন ছিল না। যেহেতু মো. গোলাম সারোয়ারের কথামত আমি তাকে পাঁচ লাখ টাকা উেকাচ দিতে অস্বীকার করি এবং পর পর দুটি পত্র লিখি, তাই তিনি অসম্পূর্ণ এবং সুস্পষ্ট মতামত ছাড়াই একটি আমদানি অনাপত্তিপত্র বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ৭ এপ্রিল ২০১১ তারিখে পাঠান।
২৫ এপ্রিল ২০১১ তরিখে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে উল্লিখিত আমদানি অনাপত্তিপত্রটি ফ্যাক্সের মাধ্যমে সিভিল অ্যাভিয়েশনে ফেরত পাঠান এবং সুস্পষ্ট মতামত ও সুপারিশসহ পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু মো. গোলাম সারোয়ার ওই ফ্যাক্সে পাঠানো পত্রটি গোপন করে রাখেন এবং মেইলের মাধ্যমে মূল পত্রটি তার কাছে আসার অপেক্ষায় গড়িমসি করতে থাকেন। এ ব্যাপারে গ্রুপ ক্যাপ্টেন এম সাইদুল হাসান খানের (সদস্য পরিচালনা ও পরিকল্পনা) কাছে ফ্যাক্সে আসা পত্রটি গোপন রাখেন। পত্রটি মন্ত্রণালয় থেকে আসার ৮ দিন পর অর্থাত্ ৩ মে ২০১১ তারিখে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সংশোধিত আমদানি অনাপত্তিপত্র বিমান মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
এরপর ফিলিপাইনে অবস্থিত আমার কেনা উড়োজাহাজ দুটি পরিদর্শনের জন্য ৭ এপ্রিল ২০১১ এবং ২৬ এপ্রিল ২০১১ তারিখে যথাক্রমে স্মারক নং আরবিএ/১০০২/ইএনজিজি/ভিওএল-০১/ই-৪৫ এবং ৪৬-এর মাধ্যমে পরিদর্শক নিয়োগের আবেদন করি। কিন্তু মো. গোলাম সরোয়ার পরিদর্শক নিয়োগের জন্য আবারও মোটা অঙ্কের উেকাচ দাবি করেন। আমি উেকাচ দিতে অস্বীকার করায় আবেদনের ৩৫ (পঁয়ত্রিশ) দিন পর অর্থাত্ ১২ মে ২০১১ তারিখে ছোট ছোট দুটি বিমান পরিদর্শনের জন্য তিনি ৩ জন পরিদর্শক নিয়োগ করেন—যা বাংলাদেশের সিভিল অ্যাভিয়েশনে নজিরবিহীন ঘটনা। এর আগে কখনও বড় বড় বিমান পরিদর্শনেও তিনজন পরিদর্শক নিয়োগের নজির নেই। অথচ আমার মাত্র ১৯ আসনবিশিষ্ট দুটি বিমান পরিদর্শনের জন্য তিনজন পরিদর্শককে ৪ দিনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন অরগানাইজেশনের নিয়ম অনুযায়ী যা একজন পরিদর্শকের দুই দিনের কাজ। অথচ সিভিল অ্যাভিয়েশন লোকবলের স্বল্পতা দেখিয়ে অন্যান্য কাজে বিলম্ব ঘটায়। ওই পরিদর্শকদের টিএ-ডিএ দেয়ার হিসাব ও তাদের পাসপোর্টে বৈদেশিক মুদ্রা এনডোর্সমেন্ট করার জন্য ১৯ মে ২০১১ তারিখে স্মারক নং আরবিএ/১০০৩/এডমিন/ভিজিট/ভিওএল-০১/ই-২-এর মাধ্যমে একটি আবেদন করি। কিন্তু উইং কমান্ডার মাহমুদুল হাসান (ডিএফএসআর) আমার প্রশাসনিক পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন দেলোয়ার হোসেনকে (অব.) ওই আবেদনের জন্য হীন মানসিকতা বলে তিরস্কার করেন এবং প্রত্যেক পরিদর্শককে ৮২০ (আটশ’ বিশ) মার্কিন ডলার করে নগদে পাসপোর্টে এনডোর্সমেন্ট না করে প্রদানের মৌখিক নির্দেশ দেন—যা একজন সরকারি কর্মকর্তার মুখ থেকে শোনা এক বিদেশি বিনিয়োগকারীর জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে স্মারক নং আরবিএ/১০০২/ইএনজিজি/ভিওএল-০১/ই-৫৩-এর মাধ্যমে ওই ৮২০ (আটশ’ বিশ) ডলার করে নেয়ার তিনটি বিল দস্তখতের জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করি। কিন্তু অদ্যাবদি বিলগুলো দস্তখত করে আমাকে ফেরত দেয়া হয়নি।
২০ মে থেকে ২৩ মে ২০১১ তারিখ পর্যন্ত পরিদর্শকরা বিমান দুটি ফিলিপাইনে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শকদের যাতায়াত খরচসহ সব খরচ আমি বহন করি। ওই পরিদর্শকরা সিভিল অ্যাভিয়েশনের এয়ার নেভিগেশন আদেশ এএনও (এ ডব্লিউ) এ/২১, ইস্যু-৪ প্যারা-৯, সাব-৭ অনুযায়ী পরিদর্শন এবং এএনও (এ ডব্লিউ) এ/২, ইস্যু-৪ প্যারা-৩, সাব-৩.৮ অনুযায়ী পরিদর্শনস্থলেই সার্টিফিকেট দেয়ার কথা। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়া তারা সেখানে তা না দিয়ে বাংলাদেশে এসে দেয়ার ব্যাপারে উপরের নির্দেশ আছে বলে জানান। উল্লেখ্য, এএনও(এ ডব্লিউ) এ/২, ইস্যু-৪ প্যারা-৯, সাবপ্যারা-৯.৩ অনুযায়ী নিয়োগকৃত পরিদর্শকরা কেউই বিমান দুটি পরিদর্শনের যোগ্যতা রাখেন না; কারণ ওই পরিদর্শকদের কেউই ওই বিমান দুটির সঙ্গে মোটেও পরিচিত নন। বাংলাদেশে আসার পর তাদের (পরিদর্শকদের) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মো. গোলাম সরোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে আমি মো. গোলাম সরোয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি দশ লাখ টাকা উেকাচ দাবি করেন। ওই টাকার পাঁচ লাখ টাকা তাদের সবার এবং বাকি পাঁচ লাখ টাকা ডিরেক্টর ফ্লাইট সেফটি এবং রেগুলেশন উইং কমান্ডার মাহমুদুল হাসানকে দেবেন বলে জানান। আমি উেকাচ দিতে অস্বীকৃতি জানাই। যেহেতু আমাকে বিমান দুটি পরিদর্শন সম্পর্কে কিছুই অবগত করা হয়নি, তাই এএনও (এ ডব্লিউ) এ/২,ইস্যু-৪ প্যারা-৩, সাবপ্যারা-৩.৪ মোতাবেক বিমান দুটি ডেলিভারি গ্রহণের ব্যবস্থা করি এবং ২৫ মে ২০১১ তারিখে স্মারক নং আরবিএ/১০০২/ওপিএস/জিইএন/ই-৪৩-এর মাধ্যমে সম্ভাব্য সময়সূচি জানিয়ে একটি পত্র সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করি।
২৯ মে ২০১১ তারিখ অর্থাত্ ওই আবেদনের চার দিন পর আমার কেনা দুটি বিমানের একটি বিমান চট্টগ্রামের শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কন্ট্রোল টাওয়ারের অনুমতি নিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে অবতরণ করে। অবতরণের পর বিমানটি জ্বালানি গ্রহণ করে এবং ঢাকার উদ্দেশে রওনার জন্য কন্ট্রোল টাওয়ারে যোগাযোগ করতে গেলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা ঢাকায় অবতরণের অনুমোদন নেই বলে ওই বিমানের পাইলটকে অবহিত করেন। আমি বিষয়টি অবগত হই বিমানটি যখন জ্বালানি গ্রহণ করছিল। জ্বালানি ট্রাকের এক ব্যক্তি তার সেলফোন থেকে আমাকে কল করেন এবং জ্বালানির পেমেন্ট সম্পর্কে আমাকে অবহিত করেন। এরপর পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি, আমার কেনা বিমানটি এবং তার ক্রুদের সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আটক করেছে এবং ক্রুদের মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে—যা আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের শিকাগো কনভেনশন ৭ ডিসেম্ভর ১৯৪৪ সালের চ্যাপ্টার ২-এর আর্টিকেল ৫ ধারা ভঙ্গ করা হয়েছে।
আমি বিষয়টি পরিষ্কার করে জানার জন্য সিভিল অ্যাভিয়েশনে যাই এবং ডাইরেক্টর ফ্লাইট সেফটি ও রেগুলেশন উইং কমান্ডার মাহমুদুল হাসাসের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে চাইলে তিনি সাক্ষাত্ দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে আমি বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যান, সিভিল অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে চাইলে পিএসটু চেয়ারম্যান তিরস্কারের স্বরে বলেন, আমি কেন এখানে এসেছি এবং চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে দেখা করার প্রশ্নই ওঠে না এবং চেয়ারম্যান সাহেব দেখা করার জন্য মোটেও আগ্রহী নন। পরে ২ জুন ২০১১ তারিখে ওই বিমান ও তার ক্রুদেরকে জোর করে চট্টগ্রাম শাহ-আমানত বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়ন করে ফেরত পাঠানো হয়। ফলে রূপসী বাংলা এয়ারলাইন্স আর্থিকভাবে অভূতপূর্ব ক্ষতির সম্মুখীন হয়—যার পরিমাণ প্রায় ষোল কোটি টাকা। এছাড়া বিমানগুলোর ভ্যালিড এয়ার ওরদিনেস সার্টিফিকেট ছিল না বলে উইং কমান্ডার মাহমুদুল হাসান (ডিএফএসআর) যে অসত্য তথ্যসংবলিত বিবৃতি মিডিয়ায় দিয়েছেন তাতে রূপসী বাংলা এয়ারলাইনসের ভাবমূর্তি জনসম্মুখে দারুণভাবে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে, যা অপূরণীয়।
এরপর আবারও ৪ জুন ও ৭ জুন ২০১১ তারিখে স্মারক নং আরবিএ/১০০২/ওপিএস/জিইএন/ই-৪৯ এবং ই-৪৪-এর মাধ্যমে চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে, ২০ জুলাই ২০১১ তারিখে সচিব মহোদয়ের কাছে এবং ১৪ আগস্ট ২০১১ তারিখে মাননীয় মন্ত্রী, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারক নং আরবিএ/১০০২/ওপিএস/জিইএন/ই-৫২ এর মাধ্যমে পৃথক পৃথক আবেদন করি, কিন্তু দুঃখের বিষয় কোনো আবেদনেরই কোনো জবাব অদ্যাবধি আমি পাইনি বা কেউই আমাকে তলব বা কোনো প্রশ্ন করেনি। তাই আমি বাধ্য হয়েই অন্যায় আবদার, অবিচার, কর্তব্যের প্রতি অবহেলা এবং দেশের ভবিষ্যত্ প্রজন্মকে এহেন চক্রের হাত থেকে রক্ষার জন্য ও সুবিচারের আশায় গত ৩১ জুলাই ২০১১ তারিখে মহামান্য বিজ্ঞ ঢাকা মহানগর দায়রা ও সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মেট্রো স্পেশাল মামলা নং ২৬৩/২০১১ দায়ের করি। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে গত ১৬ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে একটি, ২৩ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে দুইটি, ২৪ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে একটি, ২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে একটি, ২৪ আগস্ট ২০০৯ তারিখে একটি, ৫ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে একটি, ৩০ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে একটি, ১ জুলাই ২০১০ তারিখে একটি, ২৯ মার্চ ২০১১ তারিখে একটি, ২৪ এপ্রিল ২০১১ তারিখে তিনটি, ১৫ মে ২০১১ তারিখে একটি, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে একটি, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে একটি, এ বছরের ২৩ অক্টোবর একটি এবং ২৫ অক্টোবর একটি পত্র সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখি যার কোনো উত্তর বা কার্যক্রম অদ্যাবধি আমাকে অবহিত করা হয়নি।
আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি : রূপসী বাংলা এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, তিনি বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। এ ব্যাপারে সরকার সহযোগিতা না করলে তিনি আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হবেন।
সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য পাওয়া গেল না : এ ব্যাপারে সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান মাহমুদ হুসাইনের বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোনে বার বার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। সিভিল অ্যাভিয়েশনের ডেপুটি ডিরেক্টর এয়ার ক্রাফট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লাইসেন্স মো. গোলাম সারোয়ারকে তার মোবাইলে ফোন করলে তিনি পরিচয় জানতে চান। পরিচয় দেয়ার পর তিনি বার বার হ্যালো হ্যালো বলে জানান—ভাই ঠিকমত শোনা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন করলে একই কথা বলেন। এরপর তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/12/12/121867

No comments:

Post a Comment