Sunday 27 March 2011

দাম বৃদ্ধি : ওএমএস’র চাল সঙ্কট : মাগুরার মহম্মদপুরে অভাবী মানুষের হাহাকার বাড়ছে

মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি

মহম্মদপুরে ওএমএসের চাল না পেয়ে প্রতিদিন ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। চাল না পেয়ে মহম্মদপুরে বেড়ে যাচ্ছে অভাবী মানুষের হাহাকার।
তখন সকাল ৭টা। ওএমএসের চাল দেয়া শুরু হতে আরও দু’ঘণ্টা বাকি। ডিলার দোকান খোলেননি। চাল নিতে শুরু হয়ে গেছে লাইনে দাঁড়ানোর প্রতিযোগিতা। সময় যত গড়াচ্ছে, ততই দীর্ঘ হচ্ছে অভাবী মানুষের মিছিল। বাড়ছে হৈচৈ-চেঁচামেচি। ঘড়ির কাঁটায় ৯টা। দোকান খুলতে লাইনে দাঁড়ানো শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ চালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। চাল দিতে গলদঘর্ম হচ্ছিল দোকানের লোকজন। ১১টা বাজতেই খবর এলো আজকের বরাদ্দের চাল শেষ। তখনও চালের অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে শত শত মানুষ। এর মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। ডিলার বেচারা পালিয়ে বাঁচলেন। শুরু হলো চালের জন্য হাহাকার। এ চিত্র নিত্যদিনের। মহম্মদপুর উপজেলা সদরের খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রির সময় সব ডিলারের দোকানের সামনে এ দৃশ্য দেখা যায়। গরিব-অসহায় লোকজনের প্রধান খাবার মোটা চালের দাম অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ এবং ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। একটু কম দামে চাল সংগ্রহের এমন দৃশ্য এখন জেলার সর্বত্রই দেখা যায়। খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রথমে পাঁচজন, পরে দুজন বাড়িয়ে সাতজন করে ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে উপজেলা সদরে চারজন এবং উপজেলা সদরের বাইরে বড়বাজারে তিনজন। সারা জেলায় মোট ৩১ জন ডিলার সপ্তাহে মঙ্গল ও শুক্রবার বাদে পাঁচদিন এক মেট্রিক টন করে চাল বিক্রি করছেন। একজন ডিলার দিনে ৫ কেজি করে সর্বোচ্চ ২০০ জনকে চাল দিতে পারছেন।
জানা গেছে, খোলাবাজারে বিক্রয় কেন্দ্রে যে চাল ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বাজারে তার দাম ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা। বৃদ্ধ আবুল হোসেন বলেন, ফজরের নামাজ পড়ে লাইনে দাঁড়াই। পরে এসে দাঁড়ালে সেদিন আর চাল পাই না। তখন না খেয়ে থাকতে হয়। বোরকা পরে অনেক মহিলা চাল নিতে এসেছেন। তাদের একজন পরিচয় না দিয়ে বলেন, কখনও এভাবে চাল নিতে আসিনি। এখন নিরুপায় হয়ে আসতে হচ্ছে। লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়ানো বৃদ্ধা ফুলজান বেগম জানান, গায়ে বল নেই। ছেলেবউরা কাজে যায় আর আমাকে পাঠায় চাল আনতে। স্কুলড্রেস পরা শিশু আলম রায়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। সে জানায়, লাইনে আগে দাঁড়াতে পারলে স্কুল ধরতে পারি, না হলে পারি না। সরেজমিনে উপজেলা সদর, নহাটা, বাবুখালী, রাজাপুর, বালিদিয়া, বিনোদপুর, দিঘা ও পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের দাম জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলকেও ছাড়িয়ে গেছে। মোটা চালের প্রধান ক্রেতা গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ। মোটা চাল এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫-৩৮ টাকা। চিকন চালের দামও কেজিপ্রতি বেড়েছে ৭-১০ টাকা। চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদেশে ওএমএস চালু করা হলেও এর তেমন কোনো প্রভাব বাজারে পড়ছে না।

No comments:

Post a Comment