Wednesday 23 February 2011

নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি : খুলনায় ঠিকাদার ব্যবসায়ীরা বিপাকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা

খুলনা অফিস

নির্মাণ সামগ্রীর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে খুলনা অঞ্চলে নির্মাণ কাজসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের উপকরণের দাম ২০ থেকে ২৫ ভাগ বেড়েছে বলে মার্কেট ঘুরে জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রড ও বিটুমিনের দাম। এক শ্রেণীর মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের তত্পরতা রুখতে প্রয়োজনীয় সরকারি উদ্যোগের অভাব রয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন।
সূত্র জানায়, নির্মাণ কাজের অন্যতম প্রধান উপকরণ রডের দাম গত দুই মাসে তিন দফা বেড়েছে। খুলনার বিভিন্ন বাজারে ৬০ গ্রেডের রড প্রতিটন বিক্রি হচ্ছে ৫৯ থেকে ৬০ হাজার টাকা। ৪০ গ্রেডের রড প্রতিটন ৫১ থেকে ৫২ হাজার টাকা। মাসখানেক আগেও ৬০ গ্রেড রড ৫১ হাজার ও ৪০ গ্রেড রড ৩৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। রডের পাশাপাশি বাজারে বেড়েছে সিমেন্টের দামও। কোম্পানিভেদে প্রতিবস্তা সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে এ দর ছিল বস্তাপ্রতি ৩১৫ থেকে ৩২০ টাকা। নির্মাণ কাজে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান বিটুমিনের দাম বেড়েছে ব্যারেলপ্রতি ১ হাজার থেকে ১২শ’ টাকা। প্রতি ব্যারেল অর্থাত্ দেড়শ’ কেজি বিটুমিনের আগের দাম ছিল ৬ হাজার ১০০ থেকে ৬ হাজার ২০০ টাকা।
বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার ৩শ’ টাকায়। বালুর দামও বেড়েছে কয়েকদফা। খুলনার বাজারে ৪ ধরনের বালু পাওয়া যায়। মোটা বালু, কুষ্টিয়ার বালু, সিলেট বালু ও ধুলা বালু। এসব বালু ফুট প্রতি এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। গত মাসে সিলেট বালু ফুটপ্রতি বিক্রি হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ২৯ টাকায়। পাথর প্রতি ফুট এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৪ টাকায়। পলিথিনের এক মাস আগের দর ছিল প্রতি কেজি ৯০ টাকা, এখন তা ১১১ টাকা। ইটের দামও একই সময়ের ব্যবধানে প্রতি হাজারে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রডের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে স্টিল রি-রোলিং মিল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কাঁচামালের অভাবে রডের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। এ কারণে রডের দাম আগামীতে আরও বাড়তে পারে। তবে সাধারণ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, কাঁচামাল সঙ্কটের কারণে রডের মূল্য বেড়েছে—এ কথা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ দেশে স্ক্র্যাপ ও ফিনিশড রড আমদানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিছু স্টিল রি-রোলিং মিল মালিক ও আমদানিকারকদের একটি সিন্ডিকেট কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে রডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন নির্মাণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সাধারণ ঠিকাদাররা জানান, বিভিন্ন টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে প্রতিযোগিতামূলক দরে তারা বিভিন্ন নির্মাণ ও সংস্কার কাজের ঠিকাদারি পেয়ে থাকেন। হঠাত্ করে নির্মাণ সামগ্রীর দাম কয়েকদফা বেড়ে যাওয়ায় তারা এখন আর্থিকভাবে লোকসানের মুখোমুখি রয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে কাজ বন্ধ রাখতেও বাধ্য হচ্ছেন। শুধু ঘরবাড়ি ও ভবন তৈরি নয়, রাস্তা, পুল, সেতুসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজে ব্যাপকভাবে লোহার রড ও সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়। তাই সিমেন্ট ও রডের দাম বাড়লে এসব কাজে স্বাভাবিকভাবেই বিঘ্নের সৃষ্টি হয়। সামগ্রিকভাবে সব নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এ অবস্থায় নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়া খুবই দুরূহ হয়ে পড়েছে। অনুরূপ কথা বলেছেন খুলনার কয়েকজন আবাসন ব্যবসায়ী। নির্মাণ সামগ্রীর দাম অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় তারা সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

No comments:

Post a Comment